বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। —ফাইল চিত্র।
দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে দার্জিলিং আসন থেকে নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। তবে দল তাঁর বিরুদ্ধে এখনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। বরং, ভোট শেষে বিজেপির একাংশের দাবি, নির্দল দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বিজেপির সুবিধাই করে দিয়ে থাকতে পারেন বিষ্ণু! যদিও বিধায়কের দাবি, তিনি নিজে জেতার জন্যই দাঁড়িয়েছিলেন।
এ বার পার্বত্য দার্জিলিঙের তিন বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় ভোটের ফল খুবই হাড্ডাহাড্ডি থাকবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। বিজেপির একটি অংশের দাবি, পাহাড়ে তারা নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ হবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল লামা, বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মুনিশ তামাং ও নির্দল প্রার্থী বিষ্ণুপ্রসাদের মধ্যে। দার্জিলিং পার্বত্য জেলার বিজেপির যুব মোর্চার সহ-সভাপতি সুপেন্দ্র প্রধানের দাবি, “পাহাড়ের তিন বিধানসভা এলাকা থেকে গত লোকসভার মতো ব্যবধান হবে না। তবে তিন বিধানসভা মিলিয়ে ৮০-৮৫ হাজার ব্যবধানথাকবে বিজেপির পক্ষে।”অপর অংশের মতে, বিষ্ণু বিশেষত কার্শিয়াং বিধানসভা থেকে বেশ কিছু ভোট পেতে পারেন। বিষ্ণু যদি বিজেপি-বিরোধী ভোট ঝুলিতে পুরতে পারেন, তা হলে বিজেপির জয়ের পথ‘মসৃণ’ হবে।
তবে বিষ্ণু এই যুক্তি মানতে নারাজ। ভোটের ফল কী হতে পারে, সরাসরি সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তাঁর দাবি, “সমতলে বিজেপির ফল খারাপ হবে। পাহাড়ের ভোট ভাগ হবে। আমি যা চেয়েছি, তা-ই হবে! বিজেপি নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দেব, দিল্লি আর কলকাতায় টেবিলে বসে রাজনীতি হয় না! পাহাড়ের মাটিতে রাজনীতি করতে হলে পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করতে হয়।”
একদা বিজেপির ‘নিশ্চিত’ আসন দার্জিলিং নিয়ে প্রার্থী ঘোষণার সময় থেকেই টানাপড়েন ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ৬টি আসনের মধ্যে দার্জিলিং আসন থেকেই সব চেয়ে বেশি ৩৫টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। নির্বাচন কমিশন সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে। তবে তার পরেও জয় আসবে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘পাহাড়ে তৃণমূলের পতাকা নেই। অনীত থাপা তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা, পরিচিতি এবং পেশি শক্তির সাহায্যে নিশ্চিত ভাবে ব্যবধান কমাতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু পাহাড়ের মানুষের কাছে বিজেপি দল এবং প্রতীক পরিচিত। তাই বিজেপির ব্যবধান নিয়ে হিসাব চলতে পারে কিন্তু জয় নিয়ে ভাবনা নেই।”
পাহাড়ে বিজেপির ভরসা কম ভোট দানের হার। বিজেপির দার্জিলিং পার্বত্য জেলার মুখপাত্র সঞ্জীব লামার মতে, “জিটিএ, পঞ্চায়েত, পুরসভা সব ওদের। তাই বেশি ভোট পড়লে সেই ভোটটা ওদের পক্ষেই যাওয়ার সম্ভবনা ছিল। যে ৭১% মতো ভোট পড়েছে, আমাদের হিসেব অনুযায়ী তার ৪৫-৫০% আমাদের পক্ষে গিয়েছে।” তবে এর পাল্টা যুক্তিও আছে দলের মধ্যে। বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, “২০১৯ সালে শিলিগুড়ি বিধানসভা ছিল বামেদের। পুরসভা, মহকুমা পরিষদ ছিল বামেদের। তার পরেও ৭টি বিধানসভা মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে বামেরা ৫০ হাজারের মতো ভোট পেয়েছিল। তাই স্থানীয় সরকারে ক্ষমতাসীন দলের সুবিধা থাকলেও তারাই যে সব সময় বেশি ভোট পাবে, বিশেষ করে, লোকসভা নির্বাচনে, তার কোনও মানে নেই।”