সৌমেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
পদ্মবনে কোন্দল! ‘ঘরের আঙিনা’ ছেড়ে যা পৌঁছে গিয়েছে লোকসভা নির্বাচনী ময়দানে। পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে লড়তে নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দলেরই প্রাক্তন নগর মণ্ডল সভাপতি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের ‘গড়’ কাঁথিতে এই ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরে।
ষষ্ঠ দফায় আগামী ২৫ মে কাঁথি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। সেখানে এই পর্বের নির্বাচনে লড়তে দেখা যাবে শুভেন্দুর ছোট ভাই তথা বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক
সৌমেন্দু, তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক এবং কংগ্রেসের ঊর্বশী ভট্টাচার্যকে। এই তিন প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচনী ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন বিজেপির কাঁথি নগর মণ্ডলের প্রাক্তন সভাপতি বিদেশ বসু মাইতি। গত ২ মে সৌমেন্দু মনোনয়ন জমা দেন। এর ঠিক পরদিনই নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিদেশ। এতে কাঁথিতে সৌমেন্দুের সঙ্গে বিদেশের লড়াই জমতে পারে বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের।
গত বিধানসভা ভোটে বিদেশের নেতৃত্বে লড়ে দক্ষিণ কাঁথি থেকে বিজেপির বিধায়ক হয়েছিলেন অরূপ দাস। এর পরই বিদেশকে নগর মণ্ডলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন জেলার নেতৃত্ব। তবে ২০২২ সালে পুরভোটে কাঁথির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিদেশ বিজেপির প্রতীকে লড়েন এবং পরাজিত হন। তার পর বিদেশের সঙ্গে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দূরত্ব তৈরি হয়। নিজেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে নিতে দেখা গিয়েছিল বিদেশকে। মনোনয়ন দেওয়ার পরে বিদেশ বলছেন, ‘‘এখন লড়াইটা যেন তৃণমূলের এ-টিম এবং বি-টিমের। বিজেপির প্রকৃত নীতি আর আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে লড়ছি।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে গেরুয়া শিবিরে আদি এবং নব্য গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল প্রকট হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যে বিজেপির পুরনো পদাধিকারীরা ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ তৈরি করেছিলেন। তাঁরা রাজ্যে সংগঠনের বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদেশ এই কমিটির তরফে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের মতো সরাসরি প্রচারে না নামলেও তিনি কাঁথি, পটাশপুর এবং ভগবানপুর বিধানসভা এলাকায় ঘুরে বিজেপির পুরনো কার্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ফলে ২৫ মে গেরুয়া শিবিরের ভোট বাক্সে দলের একাংশ কর্মী-সমর্থককে বিদেশ নিজের দিকে টানতে পারেন বলে অনুমান।
শুভেন্দুর গড়ে দলের প্রাক্তন পদাধিকারীর এমন পদক্ষেপ করায় কটাক্ষ করছে তৃণমূল। দলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা আগে নিজের ঘর সামলাক। পরে গোটা বাংলা সামলাবেন।’’ যদিও বিদেশের প্রার্থী হওয়ায় কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি বিজেপির। বিধায়ক তথা দলের জেলা (কাঁথি) অরূপ দাস বলছেন, ‘‘পুরভোটে পরাজিত হওয়ার পর উনি দলের সঙ্গে একেবারেই সম্পর্ক রাখতেন না। আর যিনি নগরের সংগঠন দেখতেন, তাঁর জন্য লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থীর ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে না।’’