সাংবাদিক বৈঠকে উদ্ধব ঠাকরে। রবিবার পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
আগামী দু’তিন দিনের সময় দিয়ে ফের বিজেপিকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলল শিবসেনা। মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র সঙ্গে এনসিপি-র প্রকৃত সমীকরণ কী, রবিবার তা জানতে চাইলেন সেনা-প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। তিনি জানান, বিজেপি যদি এনসিপি-র সমর্থন নেয়, শিবসেনার পক্ষে সেখানে থাকা সম্ভব নয়। এক সময় অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার তেরো দিনে পড়ে গিয়েছিল যে শরদ পওয়ারের জন্য, তাঁরই এনসিপি-র সমর্থন বিজেপি নেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সেনা-প্রধান। পাশাপাশি তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্রে স্থায়ী সরকার গঠন হোক সেটা আমরাও চাই, কিন্তু তাই বলে কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার করব না।”
ঘটনাচক্রে এ দিনই প্রথম বারের জন্য মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রসারিত সেই মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির কথা ছিল শিবসেনার অনিল দেশাইয়ের। সেই মতো তিনি দিল্লি পৌঁছেওছিলেন। কিন্তু উদ্ধবের নির্দেশে রাইসিনা হিল না পৌঁছে ফের তিনি উড়ে আসেন মুম্বইতেই। তখনই জল্পনা শুরু হয়, তবে কি বিজেপি-র সঙ্গে কোনও সম্পর্কই রাখতে চাইছে না সেনা? যদিও এ দিনই রাষ্ট্রপতি ভবনে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সেনা-সাংসদ সুরেশ প্রভু। শিবসেনা আগেই জানিয়েছিল, তাঁকে মন্ত্রী করতে হলে বিজেপি নিজের কোটায় করুক। ইতিমধ্যেই সেনার তরফে জানানো হয়, এ দিন সন্ধ্যায় মুম্বইতে বৈঠকে বসবেন দলীয় নেতৃত্ব। তার পর থেকেই গোটা দেশের নজর ছিল সেনার এই বৈঠকের দিকে। শনিবার উদ্ধব ঠাকরে বলেছিলেন, “আগামিকাল বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পরে দলের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।” এ দিন সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে শিবসেনা প্রধান জানিয়ে দেন, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে বিজেপি-র তরফ থেকে যদি কোনও জবাব না মেলে তবে তারা বিধানসভায় বিরোধী পক্ষেই বসবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি, মানুষের পাশেই থাকব।”
মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই রাজ্যের বৃহত্তম দল বিজেপিকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা ঘোষণা করে এনসিপি। পঁচিশ বছরের জোট ভাঙলেও শিবসেনার আশা ছিল, ‘ম্যাজিক সংখ্যা’ ছুঁতে না পারা বিজেপি সরকার গড়তে শিবসেনাকেই ডাকবে। মনন্তি নিয়ে দর কষাকষিও শুরু করে দেয় তারা। কিন্তু গোটা বিষয়েই নীরব ছিলেন বিজেপির-র শীর্ষ নেতৃত্ব। শর্তহীন সমর্থনের কথা মাথায় রেখেই তারা সেনার সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করেন। কিন্তু রাজীবপ্রতাপ রুডি থেকে রাজনাথ সিংহ মুম্বই উড়ে গেলেও সেনা-বিজেপি জট কাটেনি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে দিন দেবেন্দ্র ফডণবীস শপথ নেন, অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু সমাধানের রাস্তা ছিল অধরাই। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের ‘বিদর্ভ’কে সময়মতো আলাদা রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হবে মন্তব্যের বিরোধিতা করা হয় সেনা মুখপাত্র ‘সামনা’য়। এ দিন সে কথা ফের তোলেন উদ্ধব। তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্র ভাঙার কথা বলা হবে এবং আমরা তাদের সমর্থন করব, তা হতে পারে না।” সুরেশ প্রভু যে দলত্যাগ করেছেন সে কথাও জানিয়ে দেন উদ্ধব।
আগামি সোমবার মহারাষ্ট্রে বিধানসভার প্রথম অধিবেশন বসছে। তার আগে সেনার এই বার্তা বিজেপি কী চোখে দেখছে এখন সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।