উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় তৃণমূলের বিজয় উত্সবে শব্দবাজি ফাটানোয় প্রতিবাদ করায় মারধরে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃতের নাম হরিপ্রসাদ রায় (৫৫)। তিনি চোপড়ার কোটগছের বাসিন্দা ছিলেন। মৃতের পরিবারের দাবি, হরিপ্রসাদবাবু সিপিএমের সমর্থক ছিলেন। অভিযোগ, সোমবার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মারধরের জেরেই মারা যান হরিপ্রসাদবাবু। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
১২ সেপ্টেম্বর বামশাসিত উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন কংগ্রেসের ৮, তৃণমূলের ৫ জন সদস্য। এঁদের সঙ্গে যোগ দেন বামেদের ৬ জন সদস্য। এর ফলে জেলা পরিষদের ২৬ জনের মধ্যে ১৯ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন। ফলে অনাস্থায় হার হয় বামেদের। এর পরে ২৫ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর তলবি সভায় অপসারিত হন যথাক্রমে পরিষদের সভাপতি সিপিএমের লাডলী চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি আরএসপি-র প্রফুল্ল দেব সিংহ। সোমবার পরিষদের নতুন সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। এ দিন পরিষদের বৈঠকে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন সদ্য সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসা আলেমা নুরি। সহ-সভাপতি হন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া পূর্ণেন্দু দে। অভিযোগ, এর পরেই এলাকায় বিজয় উত্সব শুরু করে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। শব্দবাজি ফাটাতে ফাটাতে এলাকায় মিছিল করেন তাঁরা। এ দিন দুপুরে হরিপ্রসাদবাবুর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটি শব্দবাজি তাঁর বাড়ির উঠোনে ফাটানো হয়। অভিযোগ, এর প্রতিবাদ করলে হরিপ্রসাদবাবুর ছেলে ইংরেজকে মারধর করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। ছেলেকে বাঁচাতে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন হরিপ্রসাদবাবু। কিন্তু তাঁর উপরে চড়াও হয়ে যথেচ্ছ মারধর করা হয় বলে হরিপ্রসাদবাবুর পরিবারের দাবি। এর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হরিপ্রসাদবাবু। তাঁকে দলুয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন বিকেলে সেখানেই মারা যান তিনি।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের করা না হলেও মারধরে অভিযুক্ত দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পরেই হরিপ্রসাদবাবুর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেদের মারধরের ফলেই মারা গিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার কোটগছে যাবেন সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুবীর বিশ্বাস এবং চোপড়ার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের আনোয়ারুল হক। তবে সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজয় মিছিল করায় দলের শীর্ষনেতা মুকুল রায়ের স্পষ্ট নিষেধ আছে জানিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেছেন, এলাকায় এ ধরনের কোনও বিজয় উত্সব করা হয়নি। তাঁর পাল্টা দাবি, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জেলা পরিষদ খোয়ানোয় তাঁদের বিরুদ্ধে সিপিএম এ ধরনের কথাবার্তা বলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।