ভাঙচুরের পর ভিক্টোরিয়া জুটমিল। ছবি: তাপস ঘোষ।
অশান্তি যেন থামতেই চাইছে না রাজ্যের চটকলগুলিতে। নর্থব্রুক, হেস্টিংসের পর ফের একবার শ্রমিক অসন্তোষে বিপর্যস্ত ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া জুটমিল। একটি ইউনিট বন্ধের নোটিস জারিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হাঙ্গামা চলল মিল চত্বরে। ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি মারধর করা হল মিলের এক ম্যানেজারকেও। চটকলগুলিতে লাগাতার এই শ্রমিক অসন্তোষ রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে প্রতিকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা শিল্পমহলের।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। এ দিন সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ কাজে এসে শ্রমিকেরা দেখতে পান মিলের হেসিয়ান বিভাগে ঝুলছে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস। কর্তৃপক্ষের দাবি, উত্পাদনের সঙ্গে চাহিদার ভারসাম্য রাখতেই সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়েছে ওই বিভাগ। বেশ কয়েক দিন ধরে চাহিদা কম থাকার কারণে তিনটি শিফট কমিয়ে দু’টি শিফট চালু রেখেছেন মিল কর্তৃপক্ষ। বন্ধ রাখা হয়েছে রাতের শিফট।
মিল একেবারে বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ একে একে বিভিন্ন বিভাগ বন্ধ করে দিচ্ছে, এই আশঙ্কায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন শ্রমিকেরা। কাজ হারানোর আশঙ্কায় শুরু হয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার এবং মিল ভাঙচুর।
জ্ঞানচন্দ্র উপাধ্যায়
মিলে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি হামলা হয় অফিসারদের বাংলোতেও। প্রোডাকশান ম্যানেজারের অফিসে ঢুকে তাঁকে বেধরক মারধর করা হয়। আহত ম্যানেজার জ্ঞানচন্দ্র উপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর বুকে, পেটে এবং চোখে চোট লেগেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দননগরের এসডিপিও এবং সিআই-এর নেতৃত্বে সেখানে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। উপস্থিত ছিলেন ভদ্রেশ্বর এবং চাঁপদানি থানার ওসি। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ঠেকাতে লাঠচার্জ করে পুলিশ। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকায় যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে।
ভিক্টোরিয়া জুটমিলে শ্রমিক অসন্তোষ অবশ্য নতুন কিছু নয়। মাস ছ’য়েক আগে ‘ফিনিশিং’ বিভাগের ১৪ জন শ্রমিককে বসিয়ে দেওয়ায় প্রায় আট দিন বন্ধ ছিল মিল। বেশ পুরনো এই মিলটিতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কাজ করেন হাজার পাঁচেক শ্রমিক। এর মধ্যে শুধুমাত্র হেসিয়ান বিভাগেই কাজ করেন প্রায় দেড় হাজার জন। দিন কয়েক আগে এই জেলারই হেস্টিংস জুটমিলে শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে গিয়ে জখম হন তিন পুলিশকর্মী। চলতি বছরের জুন মাসে ভদ্রেশ্বরেরই নর্থব্রুক জুটমিলে খুন হন সিইও হরিকিষান মহেশ্বরী।