গ্রেফতার হওয়া প্রথম সাংসদের পাশে না দাঁড়ালেও দ্বিতীয় জনের পাশেই থাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কর্মিসভায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদকে গ্রেফতারির জন্য উল্টে একদা ‘নির্ভরযোগ্য’ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। সৃঞ্জয়কে গ্রেফতারির কারণ হিসাবে তাঁর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরকে ‘দায়ী’ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে সৃঞ্জয়ের পাশে দাঁড়ালেও শুভাপ্রসন্নর ভাগ্য ততটা প্রসন্ন হল না। ‘শিল্পী’ শুভাকে চিনলেও ‘ব্যবসায়ী’ শুভা কোনও অপরাধ করে থাকলে তিনি সাজা পাবেন বলে জানান মমতা। অন্য দিকে, দলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে এ দিন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, জেরা করার মতো অবস্থায় রয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
সারদা কাণ্ডে শুক্রবারই গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমুলের রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। এ দিন তাঁকে তোলা হয় আলিপুর আদালতে। গ্রেফতার হওয়া দলের এই সাংসদের পাশে দলনেত্রী দাঁড়ান কি না নেতাজি ইন্ডোরের কর্মিসভায় নজর ছিল সে দিকেই। এ দিন সেই সভা থেকে একযোগে বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিবিআই-কে আক্রমণ করলেন মমতা। বিজেপিকে ‘দাঙ্গাবাজের দল’ বলে কটাক্ষ করে তিনি দাবি করেন, “রাজ্যসভায় বিল পাশ করাতে চাইছে বিজেপি। তাই বেছে বেছে তৃণমূলের সাংসদদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে আঘাত হানছে বিজেপি। দিল্লিতে জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বলেই এই গ্রেফতারি। এর বিরুদ্ধে আমাদের পথে নামতে হবে।” এরই পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধেও এ দিন সরব হন মমতা।
সৃঞ্জয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাফাই, “সারদার কাছ থেকে বিজ্ঞাপন নিয়ে কাগজ চালাত টুম্পাই। এটা কী করে অপরাধ হয়? দিল্লিতেও একাধিক চিটফান্ড রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?” সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। “সারদা কাদের প্রতারণা করেছে সেই তদন্ত না করে সিবিআই এখন সারদাকে কারা প্রতারণা করেছে সেই তদন্তে ব্যস্ত। সিবিআইয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে তো সুপ্রিম কোর্টও প্রশ্ন তুলেছে।”
তবে সৃঞ্জয়ের পাশে দাঁড়ালেও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিল্পি শুভাপ্রসন্নর পাশে থাকলেন না মমতা। অপরাধ করে থাকলে তিনি যে সাজা পাবেন তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়: “শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে আমি চিনি। কিন্তু তাঁর ব্যবসার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তিনি যদি বেআইনি কিছু করে থাকেন, তবে অবশ্যই শাস্তি পাবেন।” বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভয় দেখিও না, ভয় পাইও না।”
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের প্রতিক্রিয়াকে ‘স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’ বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতা মানব মুখোপাধ্যায়। “খাঁচায় পোরা হলে সবাই নখ-দাঁত বের করে। বিজেপি দাঙ্গাবাজ দল সেটা এত দিনে জানতে পারলেন?”—বলেন তিনি। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়: “নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে সিবিআই। যারা লুঠ করেছে, স্বাভাবিক ভাবেই তারা ভয় পাচ্ছে।”