পাকিস্তানের সেনা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে গুলিবিদ্ধ স্কুল ছাত্রী মালালা ইউসুফজাই-এর। ২০১২ সালে এএফপির তোলা ছবি।
নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই-এর উপরে হামলার অভিযোগে ১০ জনের ২৫ বছরের কারাদণ্ড হল। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সোয়াট-এর সন্ত্রাসবিরোধী আদালত এই সাজা ঘোষণা করে।
সোয়াটের মিনগোরা শহরে ২০১২-র ৯ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পথে ১৪ বছর বয়সী মালালার উপরে গুলি চালায় এক দল দুষ্কৃতী। মালালা-র মাথায় গুলি লাগে। আহত হয় তার দুই বন্ধু কায়নাত এবং সাজিয়াও। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাকিস্তানে মালালার অস্ত্রোপচার হয়। পরে মালালাকে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পরে সুস্থ হন মালালা। এই হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী তহরিক-ই-তালিবান।
নারী ও শিশুদের শিক্ষার জন্য তার আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪-য় নোবেল শান্তি পুরস্কার পান মালালা। মালালা-র সঙ্গে এই নোবেল ভাগ করে নেন ভারতে শিশুশ্রম বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কর্মী কৈলাস সত্যার্থী। মালালাই এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে কমবয়সী নোবেল পুরস্কার প্রাপক।
মালালা-র উপরে যে সময়ে গুলি চলে তখন সোয়াট উপত্যকা কার্যত পাকিস্তানি তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তানি তালিবানদের নেতা মৌলানা ফজলুল্লার ‘রাজত্ব’ চলত সেখানে। কঠোর ইসলামি অনুশাসন বলবৎ করতে মুণ্ডচ্ছেদ করে হত্যা, প্রকাশ্যে বেত মারার মতো নানা সাজা ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। কিন্তু ওই পরিবেশেও নারীশিক্ষা, শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়নি ছোট্ট মালালা। সেই মতামতের শাস্তি দিতেই তালিবান জঙ্গিরা মালালাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ব্রিটেনে চিকিৎসার পরে সুস্থ হলেও আজও দেশে ফেরা হয়নি মালালার। তবে নারীশিক্ষা, শিশুদের অধিকার নিয়ে তার আন্দোলন সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে।
২০০৯ থেকেই সোয়াটকে তালিবানমুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছিল পাক সেনা। সেই অভিযানে সাফল্যও মিলেছে বলে দাবি পাক-প্রশাসনের। এরই অন্যতম নিদর্শন ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে পাক সেনা মালালার উপরে হামলার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করে। পাক সেনা, স্থানীয় পুলিশ, আইএসআই এবং সেনা গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে এই সাফল্য মেলে বলে জানায় পাক সরকার। অভিযুক্ত ১০ জন হল বিলাল, শৌকত, সালমান, জাফর, ইকবাল, ইনসারুল্লা, জাফর আলি, ইরফান, ইজহার, আদনান এবং ইক্রাম। এর মধ্যে আসবাব ব্যবসায়ী ইনসারুল্লাই মূল চক্রী বলে অভিযোগ। সে-ই এই দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে জানিয়েছিল পাক-প্রশাসন। সোয়াটের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এই ১০ জনের বিচার শুরু হয়। এ দিন তাদের ২৫ বছর জেলের সাজা দিল আদালত।