সেতারের তানসেন

উস্তাদ মুস্তাক আলি খানের ১৭ পর্দা ঘরানা সেতারের যুগপুরুষ পণ্ডিত দেবু চৌধুরী। জন্ম ১৯৩৫-এর ৩০ মে। বাংলাদেশের ময়নমন সিংহ ছেড়ে ভারতে যখন তাঁর বাবা, মা, ছয় ভাইবোনকে নিয়ে এ দেশে পাড়ি দেন তখন তাঁর বয়স মাত্র চার। ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘‘বাংলাদেশের নদী পার হওয়ার সময় মাকে বলেছিলাম, মা দেখো জলের উপর আলো জ্বালিয়ে কত বাড়ি সাঁতার কাটছে।’’

Advertisement

সুমনা কাঞ্জিলাল

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ১৯:৩০
Share:

উস্তাদ মুস্তাক আলি খানের ১৭ পর্দা ঘরানা সেতারের যুগপুরুষ পণ্ডিত দেবু চৌধুরী। জন্ম ১৯৩৫-এর ৩০ মে। বাংলাদেশের ময়নমন সিংহ ছেড়ে ভারতে যখন তাঁর বাবা, মা, ছয় ভাইবোনকে নিয়ে এ দেশে পাড়ি দেন তখন তাঁর বয়স মাত্র চার। ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘‘বাংলাদেশের নদী পার হওয়ার সময় মাকে বলেছিলাম, মা দেখো জলের উপর আলো জ্বালিয়ে কত বাড়ি সাঁতার কাটছে।’’ পরিবারের কেউ কোনও দিন চাননি তিনি সঙ্গীতে আসুন। তবু, পণ্ডিত পাঁচুগোপাল দত্তের কাছে খুব ছোটবেলায় নিজ উদ্যোগে হাতেখড়ি হয়ে গেল। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর উস্তাদ মুস্তাক আলি খানের কাছে আবারও নিজ উদ্যোগে হাজির তিনি। অনেক মানসিক পরীক্ষা ও সাধনার পর ধীরে ধীরে উস্তাদজির প্রিয় শীর্ষ হয়ে উঠলেন পণ্ডিতজি। সেতারের মূর্ছনায় গুরু-শিষ্য হয়ে উঠলেন একে অপরের পরিপূরক। তাই শিষ্যের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত গুরু মৃত্যুর আগে অবধি বার বার বলেছেন, “দিল্লিতে বসে আছে আমার তানসেন।’’

Advertisement

২০০০ সাল। গুরু উস্তাদ মুস্তাক আলি খানের নাম ইউম্যাক সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করলেন দিল্লির সারিতা বিহারের কাছে। তৈরি হল তাঁর স্বপ্নের সঙ্গীতালয়। এখন একমাত্র ছেলে প্রতীক চৌধুরী ও পুত্রবধূ রুনা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ৬৫ জন ছাত্রছাত্রী। পণ্ডিতজি বলেন, “আমি স্বল্প সংখ্যক ছাত্রছাত্রীতে বিশ্বাসী। তাতে সবার উপরে নজর দেওয়া যায়।’’

৮০ বছরের দোরগোঁড়ায় এসে বার বার ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি পুরনো দিনগুলিতে। কখনও দিল্লিতে মাত্র ২০০ টাকা মাইনের প্রথম চাকরি জীবনে ক্যারলব্যাগের ছোট একটা ঘরে চারপাইয়ের স্মৃতি, কখনও প্রথম বর্ষের ছাত্রী মঞ্জুশ্রীকে স্ত্রী হিসাবে বরণ করা, সেই মঞ্জুশ্রীর জন্য প্রভাত মঞ্জুরী রাগের সৃষ্টি, আবার ক্যানসার আক্রান্ত গুরুজি এবং মঞ্জুশ্রীর চিরতরের বিদায়।

Advertisement

১৯৯২-এ পদ্মভূষণ পুরস্কারে সন্মানিত হন। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সন্মানিত ১৯৯৩তে। দিল্লি রাজ্য পুরস্কার ১৯৯৫, তানসেন পুরস্কার আরও কত সম্মান মিলেছে দেশ-বিদেশ থেকে। সাতটি বই তিনি রচনা করেন। এ ছাড়া অসংখ্য সিডি ও ক্যাসেট। তাঁর অধীনে প্রায় ৪১ জন ছাত্রছাত্রী পিএইচডি করেছেন।

নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর আবেদন, সঙ্গীতকে সাধনা হিসাবে নেওয়াটাই প্রকৃত সঙ্গীত পূজা। তাড়াতাড়ি ফল লাভের লোভ এই প্রজন্মকে অস্থির করে তুলেছে বলে তাঁর মত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement