সংগৃহীত চিত্র।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে জলবায়ু পরিবর্তনের আগাম সতর্কতা এবং দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এক আন্তর্জাতিক আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে। কলকাতায় পিপিপি মডেলে এই সভা হবে রাজ্য সরকারের সহায়তায়।
শুক্রবার কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী, প্রাক্তন আমলা দেবাশিস সেন, নানা বিষয়ে গবেষণারত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্ণধাররাও উপস্থিত থাকবেন।
ব্যক্তিগত পরিসর থেকে কর্মক্ষেত্র, বর্তমানে জীবনের একটা বড় অংশে জায়গা করে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সহজে চিঠি লেখা থেকে সংবাদ পাঠ, সবই হচ্ছে তার মাধ্যমে। এ বার এই প্রযুক্তির হাত ধরেই ঝড়-বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা পরিবর্তনের আগাম খবর দেবে বিশেষ অ্যাপ। যাতে যে কোনও ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণহানি এড়ানো যায়।
প্রাক্তন আইএস অফিসার দেবাশিস সেন বলেন, “আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। সরকার এবং বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই কাজকে আমাদের আরও বেশি সাফল্যমণ্ডিত করতে হবে, যাতে বিপদের হাত থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষা করা যায়।”
পশ্চিমবঙ্গে দু’টি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ‘ক্লাইমেট ইনফরমেশন সেন্টার’ তৈরি করা হচ্ছে। একটি হবে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে, অপরটি দক্ষিণবঙ্গের বকখালিতে। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিভিন্ন আবহাওয়ার জটিলতা বিশ্লেষণ করবে এই সেন্টার। যা ‘ক্লাইমেট ইনফরমেশন সেন্টার’-এর বিজ্ঞানীদের জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেবে। এর ফলে সময়ের বহু আগেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপদ আসতে চলেছে, তার জন্য সতর্কতা ও পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। স্থানীয় এলাকা অনুযায়ী পরিবেশগত যে পরিবর্তন হচ্ছে, নানা কারণে তারও বিশ্লেষণ করা যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। ফলে পুরুলিয়ার মতো জায়গায় গ্রীষ্মকালে কত তাপমাত্রা থাকবে, তা আগে থেকে সেখানকার মানুষকে জানানো যাবে। গঙ্গায় হড়পা বান বা জলোচ্ছ্বাস কখন আসছে, সে সম্পর্কেও আগাম সতর্ক করা যাবে বলে জানান এক গবেষক। পাশাপাশি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে বিদ্যুৎ পানীয় জল এবং অন্যান্য সম্পদের অপচয় রোধের পথও নির্দেশ করা যাবে। আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় এই সবক'টি বিষয়ই আলোচিত হবে। রাজ্যের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন গবেষক গত তিন বছর ধরে এই বিশেষ প্রজেক্ট নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে। তার মধ্যে ২৫ জন পড়ুয়া তাঁদের গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন বেশ কিছু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াও।
বিভিন্ন বিষয় আলাদা ভাবে গবেষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছে। রানী রাসমণি গ্রিন ইউনিভার্সিটি পরিবেশগত ডেটা বিশ্লেষণ নিয়ে গবেষণা করেছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও তার ব্যবহার। আর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় খাদ্য নিয়ে গবেষণা করেছে। এই সমস্ত গবেষণার বিষয় একত্রিত করে এই আন্তর্জাতিক সভায় আলোচিত হবে।
প্রতি বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বহু মানুষ উদ্বাস্তুর হয়ে পড়েন। যার জেরে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ ভাবেই শিশু পাচারের মতো অপরাধ সংগঠিত হয় বিশেষত সুন্দরবন এলাকায়। এই বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হবে আলোচনা সভায়।