বাংলা পরীক্ষায় ভাল ফলের উপায় কী? প্রতীকী ছবি।
আগামী মাসের ২৩ তারিখ শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রথম দিনই রয়েছে বাংলা ভাষার পরীক্ষা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কী ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের বাংলা-র শিক্ষক প্রিয়তোষ বসু।
অতিমারির বিভীষিকা ও আতঙ্ক কাটিয়ে দু’বছর পরে শিক্ষাব্যবস্থা মূল স্রোতে ফিরেছে। দীর্ঘসময় পরে সম্পূর্ণ পাঠক্রম এবং নিয়মিত ক্লাসের পর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এ বারের মাধ্যমিক। যে হেতু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, তাই ভয় এবং চিন্তা দুটোই থাকে। আর সেখান থেকে পরীক্ষার্থীদের মুক্ত করার জন্যই এই নির্দেশনা।
প্রশ্নের ধরন- অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখন মাধ্যমিকের বাংলার প্রশ্নপত্র যথেষ্টই ছাত্রবান্ধব। একটা সময় ছিল যখন মাধ্যমিকে বাংলায় ৭০-৭৫ নম্বর পাওয়াও যথেষ্ট কঠিন ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পাঠক্রম এবং তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রশ্নের পরিবর্তিত ধরন মাধ্যমিকের বাংলায় ছাত্রদের নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে। এখন মনোযোগী ছাত্রদের অনেকেই ৯০% বা তার বেশি নম্বর পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ ভাবে সাহায্য করে বহু বিকল্পভিত্তিক এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি, যেখানে ৩৬ নম্বর থাকে।
এ ছাড়া, কবিতা এবং গল্প থেকে একটি করে ৩ নম্বরের প্রশ্ন থাকে, সাধারণত সেগুলিতে (১+২)-এই অংশ বিভাজন থাকে। এ ছাড়া রচনাধর্মী ৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকে একটি করে। সেগুলিতে অংশ বিভাজন থাকতে পারে, না-ও পারে। প্রবন্ধ থেকে একটি ৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকে, আর নাটক থেকে থাকে একটি ৪ নম্বরের প্রশ্ন। সহায়ক পাঠ ‘কোনি’ থেকে দু’টি ৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকে, বঙ্গানুবাদে থাকে ৪ নম্বর। সাধারণত এখানে চারটি বাক্যের বাংলা অনুবাদ করতে হয়। নির্মিতি অংশে প্রতিবেদন বা সংলাপ-এ থাকে ৫, আর প্রবন্ধ রচনায় থাকে ১০ নম্বর। ৯০ নম্বরের এই লিখিত পরীক্ষা ছাড়া বাকি ১০ নম্বর থাকে প্রকল্পে, যেটি স্কুলের তত্ত্বাবধানে ছাত্ররা করে থাকে।
সময় মেপে পরীক্ষা- প্রশ্নপত্রেই নির্দেশ দেওয়া থাকে প্রশ্নের ক্রম অনুযায়ী উত্তর করার জন্য। এতে সুবিধা হল ছাত্ররা প্রথমেই এমসিকিউ (MCQ) এবং এসএকিউ (SAQ)-এর উত্তরগুলি করে নেবে, ফলে এখান থেকে যে সময়টা উদ্বৃত্ত হবে তা পরে কাজে লাগাতে পারবে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের চলন হল কম নম্বর থেকে বেশি নম্বরের প্রশ্নের দিকে। স্বাভাবিক ভাবেই নির্দিষ্টক্রমে উত্তর দিলে উদ্বৃত্ত সময় সম্পর্কে ছাত্রদের একটা ধারণা তৈরি হবে, যে সময়টা তারা ব্যয় করতে পারবে রচনাধর্মী প্রশ্ন এবং প্রবন্ধ রচনায়।
যে ভাবে পড়বে- অবশ্যই পড়তে হবে খুঁটিয়ে। যে হেতু এমসিকিউ এবং এসএকিউ থাকে অনেক, তাই মূল পাঠ্যবই পড়া একমাত্র সমাধান। পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা উক্তিগুলি চিহ্নিত করে রাখতে হবে। পরীক্ষার আগে সেগুলিতেই বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। ব্যাকরণের ক্ষেত্রে বিষয়ের তত্ত্বগত দিক জানার সঙ্গে সঙ্গেই তা যথেষ্ট পরিমাণে অনুশীলন করতে হবে। অবসর সময়ে গল্প, কবিতা কিংবা প্রবন্ধগুলিকে মনে করার চেষ্টা করতে হবে, বিষয়বস্তুগুলিকে চরিত্র বা ঘটনাক্রম অনুসারে মনের মধ্যে সাজাতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য সহায়ক পাঠ ‘কোনি’ উপন্যাসের ক্ষেত্রেও। প্রস্তুতির জন্য কয়েকটা মক টেস্ট দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত টেস্ট পেপারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও, বাজারে অনেক কোশ্চেন ব্যাঙ্ক কিংবা মডেল টেস্ট পেপার আছে। এমসিকিউ, এসএকিউ, বিশেষ ভাবে ব্যাকরণের জন্য বোর্ডের টেস্ট পেপারের অন্তত দশটি প্রশ্নপত্র সমাধান করা উচিত।
বিষয় নির্বাচন- সমগ্র পাঠ্যবই থেকে কয়েকটি বিষয় আলাদা করে নেওয়া যেতে পারে বেশি নম্বর পাওয়ার লক্ষ্যে। ‘অভিষেক’ বা ‘সিন্ধুতীর’- এর মতো আখ্যানধর্মী কবিতাগুলি এ ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনাধর্মী কবিতাগুলির থেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। গল্পের ক্ষেত্রে অবশ্য প্রতিটিকেই ঘটনা পারম্পর্য অনুযায়ী মনে রাখতে হবে, আলাদা ভাবে কোনওটি উল্লেখযোগ্য নয়।
গুরুত্ব যেখানে- গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র পর্যবেক্ষণের পরে ২০২৩ এর মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র নিয়ে কিছু ধারণা করা যেতে পারে। যদিও সেটা সম্পূর্ণ ধারণাই। কবিতার ক্ষেত্রে রচনাধর্মী প্রশ্নের জন্য ‘অভিষেক’, ‘সিন্ধুতীরে’ এবং ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সে রকমই গল্পের ক্ষেত্রে ‘জ্ঞানচক্ষু’ ‘অদল বদল’ এবং ‘নদীর বিদ্রোহ’ রচনাধর্মী প্রশ্নের জন্য বিশেষ মনোযোগ পেতে পারে। ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অংশে সিরাজদ্দৌলা-ওয়াটস এবং সিরাজদ্দৌলা-মঁসিয়ে লা প্রসঙ্গ আর একেবারে শেষদিকে নবাব সিরাজের হতাশ অভিব্যক্তি বিশেষ ভাবে দেখতে হবে। নাটকের চরিত্রগুলিকেও পর্যালোচনা করতে হবে। ‘কোনি’ উপন্যাসের ক্ষিতীশ সিংহের সঙ্গে জুপিটারের বিবাদ এবং কোনির বাংলা দলে অন্তর্ভুক্তি ও মাদ্রাজের জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা (যেমন- বিজ্ঞান ও কুসংস্কার, আধুনিক জীবনে কম্পিউটার, বন সংরক্ষণ), উপযোগিতা ভিত্তিক রচনা (যেমন- ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা, দেশভ্রমণ ও শিক্ষা, উৎসবের প্রয়োজনীয়তা, বাংলার উৎসব) এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাভিত্তিক রচনা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এখনকার ‘বাংলা’ বিষয়টি ছাত্রদের সাহিত্যবোধ-এর পরীক্ষা নয়, সে কতটা বিষয়টা বুঝতে পেরেছে, তা বিশ্লেষণ করতে পারছে এবং সহজ অনায়াস ভাষায় তা প্রকাশ করতে পারছে, তার পরীক্ষা।