প্রতীকী চিত্র।
স্নাতকে প্রথম দফার ভর্তিতে বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান বিভাগকে পিছনে ফেলে আড়াই লক্ষের বেশি আসন আর্টস-এর দখলে। শতাংশের নিরিখে যা প্রায় ৭৭ শতাংশ।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে চলতি বছরের পড়ুয়াদের আবেদনপত্র ও চাহিদা বিচার করে প্রথম দফায় ভর্তি হয়েছে ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৮৪ জন। প্রথম পর্যায়ে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৮১। কলেজ ও বিষয়ভিত্তিক আসন বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪ লক্ষ ২২ হাজার ২৪৫। সেখান থেকে প্রথম রাউন্ডে পছন্দের কলেজ না পেয়ে ভর্তি হয়নি ৬০ হাজার ৮৬১ জন পড়ুয়া।
নয়া শিক্ষানীতিকে মান্যতা দিয়ে চার বছরের বিএ মেজর এবং তিন বছরের বিএ মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স চালু হয়েছে গত বছর থেকে। সেখানে মাল্টিডিসিপ্লিনারি পাঠক্রমে ভর্তি হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৩৫।
প্রথম রাউন্ডের শেষে এ বছর মোট ভর্তি ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৮৪। আর্টসে ভর্তি হয়েছে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৩৭ জন পড়ুয়া। শতাংশের নিরিখে যা ৭৬.৫২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিএসসি বা বিজ্ঞান বিভাগ। সেখানে ভর্তি হয়েছে ৪৮ হাজার ৪০৫ জন। তার পর রয়েছে বাণিজ্য বিভাগ, সেখানে ভর্তি হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৪২ জন।
বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগকে পিছনে ফেলে আর্টসের এই এগিয়ে যাওয়া দেখে শিক্ষক মহলের একাংশ মনে করছেন স্কুল স্তরে পড়াশোনায় অঙ্ক এবং ইংরেজির উপর জোর অনেক কম দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ পড়ুয়ায় টিউশন-নির্ভর হয়ে পড়ছে। উত্তর জানলেও বোঝার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তাদের। সেই কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, "প্রাইমারি এডুকেশনে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগের উপর জোর যথেষ্ট কম থাকছে। ছাত্র-ছাত্রীরা পুরোপুরি টিউশন-নির্ভর হয়ে পড়ছে। প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা, কিন্তু বিষয়ের গভীরে তারা প্রবেশ করতে পারে না। ফলে বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের প্রতি ভয় থেকেই উচ্চশিক্ষায় তা বিষয় হিসেবে গ্রহণ করছে না তারা। দ্রুত এই বিষয়ে গুরুত্ব না দিলে বিজ্ঞান ও অ্যানালিটিক্যাল সাবজেক্ট' থেকে আগ্রহ হারাবে পড়ুয়ারা।"
বিএসসি ও বিকম শাখায় মোট ভর্তি হয়েছে ৮৪ হাজার ৪৪৭ জন। মোট ভর্তির শতাংশের নিরিখে যা মাত্র ২০ শতাংশ। শিক্ষা-প্রশাসকদের একটি বড় অংশ হিউম্যানিটিজ় বিষয়ে ভর্তির প্রবণতা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দ্বন্দ্বে। অনেকের মতে, আগে যাঁরা আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করতেন, তাঁদের একটি অংশ স্কুল সার্ভিস কমিশন ও কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হতেন। দু'টি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং নিয়োগও নিয়মিত নয়। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, ভর্তির ক্ষেত্রে কলা বিভাগের বিষয়গুলির চাহিদা সব থেকে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শিক্ষকদের ব্যাখ্যা, দেশ ও রাজ্যে চাকরির মন্দা রয়েছে। অন্যান্য কর্মমুখী কোর্সের সঙ্গে একটা ডিগ্রি চাই, এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে পড়ুয়াদের মনে। যাতে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেতে অসুবিধা না হয়। পাশাপাশি নয়া শিক্ষানীতি এবং পরীক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসায় কলা বিভাগেও আজকাল বাণিজ্য বা বিজ্ঞানের মতো নম্বর পাচ্ছে পড়ুয়ারা। এ প্রসঙ্গে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, "বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ হারানো মানে শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া। শিক্ষা যেহেতু যৌথ তালিকাভুক্ত, তাই অবিলম্বে এই বিষয়ে নজর দিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্যকে।"
বুধবার থেকে আপগ্রেডেশন রাউন্ডে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে নতুন করে যে রকম পড়ুয়ারা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে, তেমনই যারা নাম নথিভুক্ত করেও ভর্তির জন্য পছন্দের কলেজ পায়নি, তারাও পরবর্তীতে পছন্দের কলেজ বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত আপগ্রেডেশন রাউন্ডে ভর্তি হয়েছে ২০ হাজারের কাছাকাছি। উচ্চশিক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম রাউন্ডে সব থেকে বেশি পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর কলেজে, ২,৯৩৫ জন। সব থেকে কম পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে দার্জিলিংয়ের সোনাদা ডিগ্রি কলেজে। পড়ুয়া সংখ্যা মাত্র ৩০।