বাঁ দিকে জয়েন্টে অষ্টম সাগ্নিক এবং ডান দিকে তৃতীয় সারা। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের পর রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাতেও তাকলাগানো ফলাফল বাঁকুড়া জেলার। শুক্রবার বেলা আড়াইটের সময় জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল ঘোষণার সময় জানা যায়, এ বারের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাঁকুড়ার দুই পড়ুয়া। এক জন সারা মুখোপাধ্যায় এবং অন্য জন সাগ্নিক নন্দী। একমাত্র মহিলা হিসাবে সারাই রয়েছেন এ বারের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রথম দশের তালিকায়। দখল করে নিয়েছেন তৃতীয় স্থান। অন্য দিকে সাগ্নিক রয়েছেন মেধাতালিকার অষ্টম স্থানে।
বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সারা মুখোপাধ্যায়। বরাবরই স্কুলে মেধাবী ছাত্রী হিসাবে পরিচিত। একই সঙ্গে বিশ্বাস করেন কঠোর অধ্যবসায়েও। দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও গৃহশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই পড়াশোনা করতেন সারা। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৭১। দিয়েছিলেন জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজাম (মেন)-এর পরীক্ষাও। সেখানেও চোখধাঁধানো রেজাল্ট সারার। ছিলেন প্রথম দশের তালিকায়। ছিল ৯৯.৯৪ পার্সেন্টাইল। শুধু পড়াশোনা নয়, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার পরামর্শে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিতে পছন্দ করতেন সারা। তাঁর এই আগ্রহ এবং পরিশ্রমের সাহায্যেই ব্যাঙ্গালরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-এ ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে নিয়েছেন সারা। উত্তীর্ণ হয়েছেন পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতের জাতীয় অলিম্পিয়াডেও।
মেধাবী পড়ুয়া হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সংবর্ধনাতেও সম্মানিত হয়েছেন সারা। আইআইএসসি, বেঙ্গালুরু ছাড়া স্বপ্ন রয়েছে আইআইটি মুম্বই থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার। তবে অবসরে আর পাঁচ জনের মতোই সারা ভালবাসেন টিভি দেখতে, গল্পের বইয়ে ডুব দিতে অথবা নাচকে সঙ্গী হিসাবে বেছে নিতে। বাবা ব্যবসায়ী, মা স্বাস্থ্যকর্মী। একমাত্র সন্তান মেধাতালিকায় জায়গা করে নেওয়ায় কার্যত আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুখোপাধ্যায় দম্পতি।
অন্য দিকে, মেধাতালিকার অষ্টম স্থান রয়েছেন বাঁকুড়া জেলা স্কুলের সাগ্নিক নন্দী। বাড়ি বাঁকুড়া জুনবেদিয়া এলাকায়। বরাবরই ভাল ছাত্র তিনিও। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর ঝুলিতে ছিল ৪৮৩ নম্বর। জয়েন্ট পরীক্ষা ভাল হওয়ায় আশা ছিল ফল ভালই হবে। তবে শুক্রবার নিজের রেজাল্ট দেখে রীতিমত বাক্যহারা সাগ্নিক! ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রতি আগ্রহ থাকায় ভবিষ্যতে ভর্তি হতে চান কোনও আইআইটিতে। এর জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্সড পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই আপাতত ব্যস্ত সাগ্নিক।
বাবা প্রাক্তন রেলকর্মী, মা নিপাট গৃহবধূ। নিজের যাবতীয় সাফল্যের পেছনে তাঁদের অবদানকেই স্বীকৃতি দিতে চান সাগ্নিক। একই সঙ্গে কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর স্কুলের শিক্ষক এবং গৃহশিক্ষকদেরও। সাগ্নিকের মা-বাবাও ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সবসময় পাশে থাকতে চান। তবে শুধু পড়াশোনা নয়। অবসরে পড়তে ভালবাসেন গল্পের বই। ভালবাসেন উপন্যাস পড়তে। যা গভীর জীবনবোধের কথা বলে।