নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের মধ্যে মউ স্বাক্ষর নিজস্ব চিত্র।
বঙ্গভঙ্গের অজানা ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে এ বার যৌথ গবেষণা। এ নিয়ে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের রবীন্দ্রনাথ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের সঙ্গে সমঝোতা পত্র স্বাক্ষরিত হল। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী দু’বছর দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে, ৮০-উর্ধ্ব বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও গল্প নথি আকারে প্রকাশ করা হবে।
নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেশন কালচারাল স্টাডিজ-এর অন্তর্গত জনগবেষণা প্রকল্পে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে কাজ হচ্ছে। তারই একটি অঙ্গ হিসাবে এই মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ক্ষেত্রে ছাত্রী গবেষকদের নিয়ে আলাদা করে টিম গঠন করে এই গবেষণা করা হবে, যা অন্যান্য গবেষণা থেকে আলাদা। সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেশন কালচারাল স্টাডিজের কো-অর্ডিনেটর মননকুমার মণ্ডল বলেন, “এই সমঝোতা পত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে ‘বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরি’ নামে জনগবেষণা প্রকল্প মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করেছে। এর ফলে এই গবেষণার কর্মতৎপরতা বিস্তার লাভ করবে। মহিলা গবেষকরা এই কাজে যুক্ত হওয়ায় গবেষণা আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে।”
ইতিমধ্যে দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনটি ক্যাটালগ প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে 'বাংলার পার্টিশন কথা: উত্তর প্রজন্মের খোঁজ ' খণ্ড আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামীতে পাঁচ জন গবেষক ও পাঁচ জন অধ্যাপক পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অশীতিপর উদ্বাস্তু মানুষদের জীবনের গল্প শুনবেন এবং তা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করবেন। এই তথ্য শুধুমাত্র গবেষণার জন্যই ব্যবহৃত হবে।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার বলেন, “এই বিষয়ের প্রতি শুধু বাংলা বিভাগ নয়, ইংরাজি, সোশ্যাল সায়েন্স, ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারাও ভীষণ আগ্রহী। নভেম্বরে আমরা একটি কর্মশালা আয়োজন করছি দেশভাগের উপরে। সেখানে বঙ্গভঙ্গের নানা দিক উন্মোচিত হবে। শুধু ঐতিহাসিক বিষয় বা তার রাজনীতি নয়, সেই সময়ে মানুষেরা কী ভাবে এই বিষয়টিকে উপলব্ধি করেছে, তাতে গুরুত্ব দেবে এই কর্মশালা।”
শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষা আরও জানান, তিনি নিজেও এই বিষয়ে একটি জার্নাল জমা করবেন। তাঁর বাবার শতবর্ষ পূর্তিতে তাঁর লেখা আত্মজীবনীতে বঙ্গভঙ্গের নানা তথ্য ফুটে উঠেছে। সেগুলি তুলে ধরা হবে। দেশভাগের ফলে কী ভাবে উদ্বাস্তু সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, অজস্র সাহিত্যে থাকা তার টুকরো চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
এই গবেষণা বা সমীক্ষার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে পারিবারিক ফটোগ্রাফ, চিঠিপত্র, ডায়েরি, নথিপত্র, স্মৃতি বিজড়িত স্মারক-সহ নানা তথ্য দু’টি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে পেশ করা হচ্ছে।
২০১৬ সাল থেকে এই প্রকল্প শুরু করেছে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে ৫০০-র বেশি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সঙ্গে মউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৯ থেকে ২২ সাল বাংলাদেশ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০২২ সালের পরে নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গবেষণা চলবে। এ ছাড়া আলিয়া, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও এই বিষয় নিয়ে যৌথ গবেষণা হয়েছে। পাশাপাশি করিমপুর পিপুলবেড়িয়া হাই স্কুল ও মুড়াগাছা গভর্নমেন্ট কলেজের অধ্যাপক ও শিক্ষকরাও বিভিন্ন গবেষণায় যৌথ ভাবে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।