ছবি: সংগৃহীত।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরাসরি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। সোমবার অসুস্থতার পর কাজে নিযুক্ত হয়েই মঙ্গলবার উপাচার্যর তরফে চিঠি গেল রাজ্য সরকারের কাছে। পাশাপাশি, দ্রুত কর্মসমিতি বৈঠক যাতে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করতে পারে তার জন্য অনুমতি চাওয়া হল উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছ থেকে।
চলতি সপ্তাহের সোমবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিট নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন ভাস্কর। সেই দিনই জানিয়েছিলেন, তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। আর তার এক দিনের মধ্যেই মঙ্গলবার রাজ্য সরকারকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে চিঠি দিল বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাচার্য বলেন, ‘‘আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছি। আমরা চাই, সরকার এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করুক।’’ শুধু ছাত্র সংসদ নির্বাচন নয়। উপাচার্য আরও জানিয়েছেন, দ্রুত যাতে কর্মসমিতির বৈঠক ডাকতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দফতরের কাছে। রেজিস্ট্রার নিজে গিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য অর্থের আবেদনও করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার এবং অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার পথে হাঁটতে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, রেজিস্ট্রার ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্য কোনও সংগঠনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠানের অনুমতি না দেওয়ার পথেও এগোবে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও ১ মার্চের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আটকাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে গাড়ি বা স্কুটি/ বাইক রাখলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত অনুমোদনের চিহ্ন স্বরূপ স্টিকার লাগাতে হবে। যাঁদের গাড়িতে সেই স্টিকার থাকবে না, তাঁদের গেটে ঢোকার সময়েই নিরাপত্তারক্ষীর কাছে উপযুক্ত আইডি কার্ড দেখিয়ে সমস্ত তথ্য নথিবদ্ধ করতে হবে। মাদক/ মদের নেশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে করা যাবে না। যদি কেউ এই নিয়ম অগ্রাহ্য করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। সকাল এবং সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হলে সকলকেই আইডি কার্ড দেখাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে নানা ধরনের গ্রাফিত্তি বা পোস্টার রয়েছে। তা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন কর্তৃপক্ষ। খবর, বিষয়গুলি নিয়েও মঙ্গলবার উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সরকারপন্থী অধ্যাপক সংগঠনের বার্ষিক সভাকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুর। পরে সেখানে ছাত্রদের মূল দাবি ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন করাতে হবে অবিলম্বে। আর ঘটনার ১৮ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চেয়ে সরকারকে ফের দেওয়া হল চিঠি। আগেও বহু বার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উপাচার্যের তরফে চিঠি গিয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। সেই সময়ও কখনও উত্তর মেলেনি।
উল্লেখ্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনও কলেজ নেই, সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শেষ বারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালে। তার পর থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোনও নির্বাচন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। অভিযোগ, বিগত পাঁচ বছরে একাধিক বার নির্বাচনের কথা তুললেও সরকারের তরফে ভ্রূক্ষেপ করা হয়নি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্রদের তরফে জরুরিভিত্তিক কর্মসমিতির বৈঠক এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হোক, সেই দাবি তোলা হয়েছিল। এর পর উপাচার্যের চিঠিতেও রাজ্য সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেবে কি না, সেই অপেক্ষায় প্রতিষ্ঠান।