প্রতীকী চিত্র।
পড়ুয়াদের র্যাগিং-মুক্ত হস্টেল পরিষেবা দিতে উদ্যোগী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকদের মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে ত্রিস্তরীয় নজরদারি ব্যবস্থা। প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ফিরতে চলেছে ওয়ার্ডেন পদ। যার মাথায় থাকছেন যাদবপুরের শিক্ষকরা।
এ বছর থেকেই প্রথম বর্ষের আবাসিকদের আলাদা দু’টি হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত বলেন, “অধ্যাপকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা আশাবাদী যে, আগামী দিনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাগিং নামে এই ভয়ঙ্কর দৈত্যের হাত থেকে মুক্ত করতে পারব। পাশাপশি, হস্টেলকে ঘিরে, সমাজে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যে যে একটা ভীতি তৈরি হয়েছে, আশা করি তা-ও আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।”
খড়গপুর আইআইটি হোক বা শিবপুর আইআইইএসটি, র্যাগিং নজরদারিতে হস্টেলে ওয়ার্ডেন পদের ব্যবস্থা রয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ছিল। হস্টেল সুপারিটেনডেন্ট পদে থাকতেন কোনও শিক্ষক। পরে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং ওই পদে নিয়োগ করা হত অশিক্ষক কর্মীদের। গত বছর র্যাগিংয়ের জেরে ছাত্র মৃত্যু ও তারপরে ছোট বড় বিভিন্ন র্যাগিংয়ের অভিযোগ সামনে আসার পরে ওয়ার্ডেন পদ ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তরফ থেকেও একটি কমিটি যাদবপুরে এসে ওয়ার্ডেন পদের সুপারিশ করে।
প্রথম বর্ষের পড়ুয়া আবাসিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ওল্ড পিজি ও নিউ ব্লক -এ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে ইতিমধ্যেই। স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আগামী ৪ অগস্টের মধ্যে কলা বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, ওল্ড পিজিতে ৯০ জন ও নিউ ব্লক-এ ৮০ জন আবাসিক থাকতে পারবেন।
তবে শুধু ওয়ার্ডেন নয়, নজরদারি আরও জোরদার করতে শিক্ষকদের নিয়ে অফিসার ইনচার্জ বা ওএসডি পদ তৈরি করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পদাধিকারীদের মূলত বিশেষ দায়িত্ব হবে র্যাগিং সংক্রান্ত। এ ছাড়াও, দ্বিতীয় বর্ষ ও শারীরিক ভাবে অক্ষম পড়ুয়াদের জন্য দু’টি হস্টেল তৈরি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের মধ্যে। সে দু’টি হল জেপিজেইউ ও নিউ বয়েজ হস্টেল। এই দু'টি হস্টেলেও ১৭০ জন আবাসিক থাকতে পারবেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীর শিক্ষার যে সমস্ত পড়ুয়ারা রয়েছেন, তাঁদের ক্লাস শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। তাঁদের জন্যও ক্যাম্পাসের ভিতরে গোপালচন্দ্র সেন ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
যাদবপুর থানার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য এ ওয়ান ব্লক এবং এ টু ব্লকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি বি, সি, ডি-- এই তিনটি ব্লকে স্নাতকোত্তর ও গবেষকেরা আবাসিক হিসেবে থাকবেন।
মেন হস্টেল মেরামতি ও সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে আর একটিও র্যাগিংয়ের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য আমরা ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করেছি। যাঁরা সিনিয়র, তাঁদের নিয়ে বিশেষ ওরিয়েন্টেশন করা হয়েছে। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে এসে দু'টি কাউন্সেলিং করা হয়েছে।”
শুধু ওয়ার্ডেন বা ওএসডি নয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইন মেনে অ্যান্টি র্যাগিং অ্যান্ড মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় তরফ থেকে। তার মাথায় থাকছেন শিক্ষক। এই সেল সামগ্রিক ভাবে সমস্ত প্রক্রিয়ার নজরদারি করবে এ বার থেকে। নজরদারি সেলটির দায়িত্বে থাকছেন অধ্যাপক অমিতাভ গুপ্ত। বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'টি ক্যাম্পাস মিলে মোট ১২ হস্টেল রয়েছে। তাতে আট জন শিক্ষক ও পাঁচ জন শিক্ষিকা নজরদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন বিভিন্ন পদে। র্যাগিং নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে মেন হস্টেল করিডোরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর তোড়জোড়ও শুরু করা হয়েছে। দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।