প্রতীকী ছবি।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় কর্মরত শিক্ষক বা পরিদর্শকদের শপথবাক্য পাঠ করার নির্দেশ দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্নপত্র দেওয়ার পর, পর্ষদের তরফ থেকে দেওয়া নির্দিষ্ট বয়ান পাঠ করে পরীক্ষার্থীদের শোনাবেন পরিদর্শকেরা।
পর্ষদের তরফ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে শপথবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “প্রশ্নপত্রের প্রতিটি পাতায় ক্রমিক নম্বরের কোড লুকনো অবস্থায় আছে, কেউ যদি কোন পাতার ছবি তোলে তাহলে বোঝা যাবে কে ছবিটি তুলেছে এবং সেই পরীক্ষার্থীর মাধ্যমিক পরীক্ষা এই বছরের মতন সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হবে। এই ধরনের ছবি থেকে পাতায় লুকিয়ে থাকা ক্রমিক নম্বর সহজে বের করা যাবে, ফলে পরীক্ষার্থীরা যেন এই ধরনের কোন কাজ করলে কোন ভাবেই গোপন রাখতে পারবে না। পরীক্ষার্থীদের সাবধান করা হচ্ছে এই ধরনের প্রচেষ্টা থেকে তাঁরা যেন বিরত থাকে।”
মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রুখতে এ বার প্রশ্নপত্রে ‘ম্যাজিক নম্বর’ বা ইউনিক আইডির ব্যবহার করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। যে ‘ম্যাজিক নম্বর’ প্রশ্নপত্রে খালি চোখে দেখা যাবে না, কিন্তু ছবি তুললেই বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহারে সেই নম্বর বুঝতে পারবে পর্ষদ। ডিসেম্বর মাসের জেলা সফরে এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
অনেক সময় দেখা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে বসেই কেউ প্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রশ্নপত্র সামাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়, এই ধরনের ছলচাতুরি রুখতে পরীক্ষার হলেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হবে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে।
পরীক্ষার ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্ষদের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষক মহলে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “প্রত্যেকটি প্রশ্নতে গোপন কোড বা ‘ম্যাজিক নম্বরের’ কথা বলছে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। যে ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োজন তার ব্যবস্থা কি করতে পেরেছে পর্ষদ।”
আবার পর্ষদের এই নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধানশিক্ষকেরা। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “আমি এই নির্দেশের মধ্যে কোন অসুবিধা দেখছি না। পর্ষদের নির্দেশ বা সতর্কতা আছে তা আরও এক বার জানিয়ে দেওয়ার মধ্যে কোন অসুবিধা নেই। এ বারে সেই নির্দেশিকা শপথ বাক্য হিসাবে কতটা পাঠ করতে হবে, সেটা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।”
হিরাপুর এমসিটি গার্লস হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য বলেন, “যতটা সতর্কতা অবলম্বন করার ততটাই করার চেষ্টা করছে পর্ষদ এবং এটা করা উচিত। এটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত।”
শিক্ষক মহলের একটি অংশের বক্তব্য হচ্ছে, শিক্ষকদের বিবেকের উপর নির্ভর করে কাজ করতে হয়। শিক্ষকদের সে রকম ভাবে শাস্তির কোন নিয়ম নেই প্রধানশিক্ষকদের হাতে। তাই পরীক্ষার হলে এই শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে শিক্ষকদের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রচেষ্টা করছে পর্ষদ।