প্রতীকী ছবি।
আমাদের দেশের অন্যতম প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দয়ারাম সাহানির দৌলতেই প্রথম মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পার নগর সভ্যতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। সেই আবিষ্কারের সঙ্গেই জানা গিয়েছিল, অতীতে ভারতবর্ষ কেন এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে জনপ্রিয় ছিল? কেন বিদেশিরা বারবার এই দেশে হানা দিয়েছিল সাম্রাজ্য দখলের লোভে? সেই ইতিহাস আবিষ্কার করতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছিলেন ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
এখনও তাঁদের উত্তরসূরিরা সেই একই কাজ করে চলেছেন। মাটির নিচে যে ইতিহাস চাপা পড়ে রয়েছে, সেই ইতিহাস খুঁজে বের করার আগ্রহ কম বেশি অনেক পড়ুয়াদেরই থাকে। এই পেশা সংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন রয়েছে তাঁদের মনে। তেমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর রইল আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য।
কী কাজ করে থাকেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা?
প্রত্নতত্ত্ববিদ তথা আর্কিওলজিস্টরা ইতিহাসের সন্ধান করেন। সেই সমস্ত সন্ধানের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়ার সময়ের কী সংযোগ রয়েছে, সেই সমস্ত বিষয়েও কাজ করে থাকেন।
কী ভাবে শুরু করা যেতে পারে?
প্রত্নতাত্ত্বিকতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, ভূগোল এবং কারিগরি বিদ্যার অংশবিশেষ। কিছু কিছু অভিযানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের জ্ঞানও প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এত গুলো বিষয় এক সঙ্গে পড়ার সুযোগ থাকে না। যদিও ভারতে এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য রয়েছে বিশেষ পরিকাঠামো।
উচ্চ মাধ্যমিকে যে কোনও বিভাগে উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা ব্যাচেলর অফ আর্টস এবং ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ডিগ্রির অধীনে অ্যানশিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি অ্যান্ড আর্কেওলজি, অ্যানশিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি, কালচার অ্যান্ড আর্কিওলজি এবং মিউজ়িওলজি নিয়ে পড়তে পারবেন।
স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর স্নাতকোত্তর পর্বে মেরিটাইম আর্কিওলজি, প্রিহিস্টোরিক আর্কিওলজি, হিস্টোরিক্যাল আর্কিওলজি বিষয়েও পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
কোথায় পড়ানো হয় এই বিষয়?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজি, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়, মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়, নব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের বেশ কিছু স্বীকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়গুলি পড়ানো হয়ে থাকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে।
পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ?
এই বিষয়টিতে গবেষণামূলক কাজের পাশাপাশি, রয়েছে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ। তাই আগ্রহী প্রার্থীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ শেখার সুযোগ পাবেন। অভিজ্ঞ পেশাদারেরাও বিশেষ ক্ষেত্রে ক্লাস করান, থাকে ইন্টার্নশিপের সুবিধা। তাই ধাপে ধাপে কাজ করার অভিজ্ঞতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে গবেষণাপত্র প্রকাশিত করার মাধ্যমে বাড়বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ, যা পরবর্তীকালে পেশায় প্রবেশের সুযোগ করে দেবে শিক্ষার্থীদের।
সুতরাং, ইতিহাসের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করার আগ্রহ থাকলে প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে রয়েছে কাজের সুযোগ। এই পেশায় ক্রমাগত শেখার পাশাপাশি, আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে নিয়মিত ভাবে অভিজ্ঞতা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।