প্রতীকী ছবি।
কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স তথা ‘এআই’-এর কথা প্রায় সবাই জানে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই বিষয়টি পাঠক্রমের আওতায় আনার পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে জোরকদমে। কারণ, আধুনিকতার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে ‘এআই’-এর জুড়ি মেলা ভার। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য নিখুঁত প্রশ্নপত্র তৈরি করা থেকে শুরু করে তাঁদের ফলাফল প্রকাশ করা— সমস্ত কাজ হতে পারে এক মিনিটের মধ্যে।
এই অসাধ্যসাধনের নেপথ্যে ‘এআই’-এর ‘চ্যাটবট ডেভেলপার’দের ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। কী ভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে, যন্ত্র যাতে মানুষের মতো করে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে, সেই সমস্তটাই এই ‘বিশেষ’ পেশাদারদের হাতের মুঠোয় বন্দি থাকে।
কারা এই ‘চ্যাটবট ডেভেলপার’?
‘চ্যাটবট ডেভেলপার’ হল সেই সমস্ত পেশাদার ব্যক্তি, যাঁরা ‘ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ তৈরি করে তাকে ব্যবহারের যোগ্য করে তোলে। বর্তমানে যে কোনও ওয়েবসাইটের ডান দিকে নিচের দিকের কোনায় একটি বেলুনের মতো ছবি জ্বলজ্বল করতে থাকে। সেখানে ক্লিক করলেই ব্যবহারীদের দেখায় ‘ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আপনার কী সহায়তা করতে পারি?’এই প্রশ্ন যিনি করছেন, তিনি যন্ত্রের মাধ্যমে যে কোনও মানুষের সংশ্লিষ্ট পরিষেবা সংক্রান্ত যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম।
আর এই উত্তরদাতাকে সক্ষম করে তোলাই হল ‘চ্যাটবট ডেভেলপার’-এর মূল কাজ। এ ছাড়াও একে নিয়মিত ভাবে সক্রিয় রাখা, ত্রুটিমুক্ত পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে নজরে নজরে রাখা, প্রয়োজন মতো চ্যাটবটকে আপডেট করা, কাজের মান উন্নত করার জন্য পরীক্ষানিরীক্ষা করা, প্রয়োজনে গবেষকদের সঙ্গে কাজ করা— এই সমস্ত বিষয়ের দায়িত্বও ‘চ্যাটবট ডেভেলপার’দের পালন করতে হয়।
কী ভাবে হওয়া যায় এমন পেশাদার?
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘এআই’,‘চ্যাটবট ডেভেলপিং’ নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই। তাই তাঁরা শুরু থেকেই পেশাদার বিষয় নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই পেশাদার দুনিয়ায় ‘ইনফরমেশন স্টিটেমস’, সংখ্যাতত্ত্ব বা ‘স্ট্যাটিস্টিক্স’, ‘কম্পিউটার সায়েন্স’ বা সমতুল্য বিষয়ে স্নাতকোত্তীর্ণ বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত পড়ুয়াদের চাহিদা সব থেকে বেশি রয়েছে। তাই প্রাক্ উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকা প্রয়োজন।
অন্যান্য দক্ষতা:
উল্লিখিত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের তরফে কম সময়ের জন্য ‘স্কিল ডেভেপমেন্ট কোর্স’ করানো হয়ে থাকে। সেই সমস্ত কোর্সের শেষে হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ যেমন পাওয়া যায়, তেমনই আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রের জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়।
কাজের সুযোগ?
ভারতবর্ষের সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে ‘চ্যাটবট’কে নিয়মিত ব্যবহারের পর্যায়ে আনার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তাই এই ক্ষেত্রে পেশাদার এবং নবীন ডেভেলপারদের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এর পাশাপাশি, বেসরকারি ক্ষেত্রেও ‘চ্যাটবট ডেভেলপার’ পদে নিয়োগ হয়ে থাকে নিয়মিত। সুতরাং, শিক্ষার্থীদের পেশায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সুযোগ থাকছে।
বেতন:
এই দেশে পেশাদার হিসাবে মাসে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। নবীনদের ক্ষেত্রেও বেতনের অঙ্ক দক্ষতার নিরিখে পাঁচের ঘর পেরিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, ইন্টার্নশিপ, গবেষণার ক্ষেত্রে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন নবীন স্নাতকরা।
বর্তমানে বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, বিনোদনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘চ্যাটবট’। তাই নবীন স্নাতকদের ক্ষেত্রে পেশায় প্রবেশের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট উজ্জ্বল।