প্রতীকী ছবি।
সমগ্র শিক্ষা মিশনের বরাদ্দ করা ১,০০০ কোটি টাকা আটকে দিল কেন্দ্র। অর্থ দফতরের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও ওই অর্থ না আসায় আর্থিক বঞ্চনা হয়েছে বাংলার প্রতি, অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর।
প্রকল্পের টাকা না দেওয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্র জানিয়েছে, সমগ্র শিক্ষা মিশনের সঙ্গে ‘পিএমশ্রী’ প্রকল্পকে যুক্ত করলেই মিলবে এই প্রাপ্ত অর্থ। যার বিরোধিতা করে বাংলা। ২২ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ দু’বারই বাংলা থেকে আধিকারিকেরা গিয়েছিলেন দিল্লিতে। কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় এই প্রকল্প ‘পিএমশ্রী’র সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার জন্য। বাংলার প্রাপ্য টাকা কেন দেওয়া হচ্ছে না এই নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব, শিক্ষাসচিব ও শিক্ষামন্ত্রী চিঠিও দিয়েছেন দিল্লিতে।
এই প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বেআইনি, অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের পরিচয়। অর্থ মন্ত্রকের অনুমোদন এবং শিক্ষা মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ অর্থ বিভাগ অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও প্রাপ্য টাকা কী ভাবে আটকাল শিক্ষা মন্ত্রক? রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই প্রকল্পের টাকা আটকানো হয়েছে।”
সমগ্র শিক্ষা মিশনের অধীনে চলতি অর্থবর্ষের মোট ১,৫০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পায় রাজ্য। তার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও আরও ১০০০ কোটি আটকে দিয়েছে কেন্দ্র। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী সরকার সারা দেশে নতুন ভাবে সেন্ট্রাল স্কুল তৈরি করতে চাইছে। সেই স্কুলগুলির নামকরণ করতে চাইছে ‘পিএমশ্রী’। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের স্কুল প্রকল্পের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাংলা-সহ তিনটি রাজ্য এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে নারাজ। বাকি দু’টি রাজ্য হল ওড়িশা ও তামিলনাড়ু। এই তিনটি রাজ্যের টাকা বরাদ্দ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
রাজ্যে শিক্ষা দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত। যেখানে যে কোনও প্রকল্পের খাতে কেন্দ্রীয় রাজ্যের অনুপাত ৬০:৪০। অর্থাৎ রাজ্যও দেয় ৪০ শতাংশ। সেখানে প্রকল্পটির নাম কেন প্রধানমন্ত্রীর নামে রাখতে হবে? এই ধরনের সিদ্ধান্তের নৈতিক আপত্তি রয়েছে সরকারের।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার স্কুল তৈরি করতে চাইছে, এখানে পিএমশ্রী নাম ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে অন্যায়। কেন্দ্রীয় সরকার সর্বত্র গৈরিকীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এর চরম বিরোধী। তা সত্ত্বেও আমরা বলব রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে রাজ্যের পড়ুয়াদের উপকার হবে।’’
প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষানীতিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি মিলিয়ে ১৪ হাজার ৫০০ পিএমশ্রী স্কুল তৈরি করা হবে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া। শিক্ষাদানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রদান করা।