সংগৃহীত চিত্র।
পয়লা বৈশাখে আকর্ষণীয় মেনু মিড ডে মিলে। কোথাও থাকছে ডিমের কারি আবার কোথাও থাকছে চিকেন কষা। সোমবার সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের আকর্ষণীয় মেনু করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
রবিবার বাংলার নববর্ষ। ১৪৩০-কে বিদায় জানিয়ে ১৪৩১ পদার্পণ। সেই দিন ছুটির দিন হওয়ায় সোমবার রাজ্যের সমস্ত স্কুলে মিড ডে মিলে পড়ুয়াদের স্পেশাল মেনু রান্না করে খাওয়ানোর নির্দেশ দেওয়া হল জেলা আধিকারিকদের তরফ থেকে। তবে এই মিড ডে মিলের মেনু জেলা অনুযায়ী পরিবর্তন হবে বলে সূত্রের খবর। স্থানীয় খাবারের উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া নির্দেশিকায়।
কলকাতা প্রাইমারি বোর্ডের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, “নববর্ষে সকলেই নতুন জামা কাপড় পরে ভাল-মন্দ খেয়ে থাকে। আমরা সারা বছর বাচ্চাদের মিড ডে মিলের পরিষেবা দিয়ে থাকি। তারাও বছরের প্রথম দিন নতুন কিছু আশা করে থাকে। স্কুলের পড়ুয়ারা আনন্দ করে খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে এই নতুন বছর উপভোগ করে তাই এই ‘স্পেশাল মেনু’-র আয়োজন।”
খালি কলকাতা জেলায় মিড ডে মিলের অন্তর্গত স্কুল রয়েছে ১,৯৬১। আর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষেরও বেশি। সারা রাজ্যে এই সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “রোজকার যে মেনু তার বাইরে নববর্ষ উপলক্ষে স্পেশাল মেনু হলে ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহিত হবে। তবে মাঝেমধ্যে খাবারের মেনু পরিবর্তন করলে বাচ্চাদের পুষ্টির দিক দিয়ে ভাল।”
নববর্ষ উপলক্ষে কলকাতা জেলার ক্ষেত্রে স্পেশাল মেনুতে থাকছে ফ্রায়েড রাইস, ডিমের কারি, আলুর দম, সঙ্গে মিষ্টিমুখ হিসাবে রসগোল্লা। বাকি জেলাগুলির ক্ষেত্রে ডিমের কারির জায়গায় বেশকিছু ডিআই চিকেন রান্না করার কথা বলেছেন। স্থানীয় স্পেশাল কিছু থাকলে তাও মিড ডে মিলের পদে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “বিশেষ দিনগুলিতে খাওয়ানো হোক, তা আনন্দের বিষয়। তবে তার পাশাপাশি প্রতি দিন যাতে তাদের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যায় তার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক। বরাদ্দ বৃদ্ধি না করলে অর্থ আসবে কোথা থেকে? এ ধরনের খাবার ছাত্রছাত্রীদের দিতে পারলে আমরা সকলে খুশি হই। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরও মিড ডে মিলের আওতায় আনা হোক। একই বিদ্যালয়ে কেউ খাবার পাবে, কেউ পাবে না। এই বৈষম্য আমাদের অত্যন্ত অমানবিক বলে মনে হয়।”
গতানুগতিক মিড ডে মিলের মেনু থেকে স্পেশাল মেনু করে খাওয়াতে খরচ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত খরচ কারা দেবে, এই প্রসঙ্গে মিড ডে মিল প্রকল্পের এক আধিকারিক জানান, স্কুলগুলির মিড ডে মিল-এ এই ‘স্পেশাল মেনু’ করার জন্য অতিরিক্ত যে খরচ হবে তা ‘মিসলেনিয়াস ম্যানেজমেন্ট ইভোলিউশন কস্ট’-এ তাদের দিয়ে দেওয়া হবে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “এক দিন মিড-ডে মিলে চিকেন বা স্পেশাল কিছু খাইয়ে হয়তো একটু প্রচার পাওয়া যায়, কিন্ত বাকি দিনগুলি বাচ্চারা কী খাচ্ছে সে ব্যাপারে সরকারের খেয়াল আছে কি। তা ছাড়া এই সামান্য বরাদ্দে ভাল কিছু খাওয়ানো সত্যি মুশকিল। তাই কেন্দ্র ও রাজ্যের উচিত মাথা পিছু বরাদ্দ বাড়িয়ে ন্যূনতম ১২টাকা করা। তা হলে কিছুটা পুষ্টিকর খাবার ছেলেমেয়েদের দেওয়া যেতে পারে।”
শিক্ষকমহলের একাংশের প্রশ্ন, প্রত্যেক নির্বাচনের আগেই কেন ‘স্পেশাল মেনু’ বা চিকেন খাওয়ানোর কথা সামনে আসে। আর ভোট চলে গেলে সেই নির্দেশ উধাও হয়ে যায়।