ছবি রয়টার্স।
হোয়াইট হাউস হইতে দুইটি সংবাদপত্রকে বিদায় দেওয়া হইল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতে, যতই বিখ্যাত বা বহুল প্রচারিত হউক, দুইটি খবরের কাগজই ভুয়া খবর পরিবেশন করে, সুতরাং উহাদের স্থান নাই। সংবাদপত্র দুইটির গ্রাহক চাঁদা বন্ধ করিয়া দিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। উপরন্তু ট্রাম্পের নিদান, কোনও সরকারি দফতর বা সংস্থাই যেন এই দুইটি কাগজ না নেয়। ট্রাম্পের প্রেস সচিব অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও দিয়াছেন— সরকার অধিক ব্যয়ে লাগাম পরাইতে চায়, দুইটি সংবাদপত্রের বার্ষিক চাঁদা বন্ধ করিলে প্রচুর ডলার বাঁচিবে। তবে সচিবের ন্যায় পাস্তা দিয়া পায়স ঢাকিবার দায় প্রেসিডেন্টের নাই। তাঁহার খোলাখুলি ঘোষণা: ওই দুইটি সংবাদপত্রের জন্য হোয়াইট হাউসের দ্বার রুদ্ধ।
অতীতে রাজার ধর্মই প্রজারও ধর্ম হইত, রাজাজ্ঞাই সাধারণ্যে আচরণীয় হইত। এই কালে তাহা হইবার উপায় নাই। সংবাদপত্র নিষিদ্ধ বা তাহার দ্বার রুদ্ধ করিলেও মানুষ, এমনকি প্রশাসকের অনুগামীগণও তাহা পড়িবেন— হয়তো উপরওয়ালাকে লুকাইয়া, নিজস্ব নিভৃতি খুঁজিয়া লইয়া, বা অন্য রূপে, ভিন্ন সংস্করণে। সাধারণ হিসাব বলে, জোর করিয়া কোনও জিনিসকে আটকাইলে মানুষ তাহার প্রতিই আকৃষ্ট হয় অধিক। তবে ভাবিবার বিষয় তাহা নহে। সংবাদপত্রের প্রতি প্রশাসকের মনোভাবটিই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। যে সংবাদই ট্রাম্পের পছন্দ না হয়, তাহাকেই তিনি ‘ভুয়া’ বলিয়া দাগাইয়া দেন। যে সংবাদপত্রই তাঁহার ঘোষিত বা গৃহীত নীতির বিরুদ্ধে যায়, তিনি তাহার বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হন। টুইটারে, প্রকাশ্য বিবৃতিতেও মাত্রাজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন, ‘ভুয়া’, ‘ব্যর্থ’, এমনকি ‘বিরোধী দল’ বলিয়া দাগাইয়া দেন। এক বৎসর পূর্বে এক সভায় জনৈক সাংবাদিকের সহিত মতান্তরের জেরে তিনি তাঁহার হোয়াইট হাউসে ঢুকিবার প্রবেশপত্রও বাতিল করাইয়াছিলেন। বিষয়টি আদালতে গড়াইলে ট্রাম্প-প্রশাসনেরই মুখ পুড়িয়াছিল। তবুও তাঁহার যে শিক্ষা হয় নাই, সাম্প্রতিক ঘটনাটিই প্রমাণ। অবশ্য যে রাষ্ট্রপ্রধান মুক্ত সংবাদমাধ্যমকে ‘গণশত্রু’ আখ্যা দিয়া থাকেন, তাঁহার শিখিবার যোগ্যতা ও সামর্থ্য লইয়াও সংশয় জাগে।
২০১৯ সালের ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক’ তালিকায় তিন ধাপ নামিয়া আমেরিকার স্থান হইয়াছে ৪৮-এ। নিত্য অপমান, হেনস্থা হইয়া দাঁড়াইয়াছে সেই দেশের সাংবাদিকদের পেশাগত বিপত্তি। সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি অধুনা জনমানসকেও প্রভাবিত করে। বিরাগভাজন সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তোপ দাগিলে তাঁহাদের সমর্থক সাধারণ মানুষও বিদ্বিষ্ট হইয়া পড়েন। প্রকাশিত সংবাদে তথ্যের প্রামাণ্যতা বা যুক্তির সারবত্তা তখন আর বিচার্য হয় না, নেতার বা নীতির সমালোচনাই হইয়া দাঁড়ায় সংবাদমাধ্যমের অপরাধ। শাসকের সমালোচনার অর্থ তখন দেশদ্রোহ, সংবাদমাধ্যমের উদ্যত অঙ্গুলি বিকৃত ও বিক্রীত হইয়া যাইবার অভিজ্ঞান। মার্কিন সংবাদপত্র দুইটিও নিষ্প্রশ্ন না হওয়ার দরুন প্রশাসনের চক্ষুশূল হইয়াছে। তাহা হইলে কি আর কোনও আশা নাই? আছে। আমেরিকার সার্বিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আবহ এখনও বিষাইয়া যায় নাই। কিন্তু সাত সমুদ্র পারের ভারত কী করিবে? সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক তালিকায় যাহার স্থান ১৪০?