আর নহে, আর নয়

প্রশাসনের কাজ কঠিনতর করিয়া দিয়াছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের, অন্তত তাঁহাদের একাংশের, অনমনীয়তা। প্রশাসনের প্রতি তাঁহাদের ক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share:

ছবি এএফপি।

সরকারি হাসপাতালে একটি মৃত্যুর ঘটনা হইতে যে সঙ্কটের সূত্রপাত, সপ্তাহ ঘুরিয়া গেল, তাহার জট কাটিল না। বস্তুত, কবে কাটিবে, তাহা এখনও স্পষ্ট নহে। বিবদমান দুই পক্ষের কে কত শতাংশ ঠিক, কাহার অন্যায় কয় আনা, তাহার আলোচনার জন্য সমাজে ও সমাজমাধ্যমে অনন্ত বিচারসভা চলিতেছে। বঙ্গসমাজ কথা বলিতে পাইলে আর কিছু চাহে না, বচসা শুরু করিলে থামিতে জানে না, সুতরাং এমন একটি উপলক্ষ হাতে পাইলে কথাসরিৎসাগর উত্তাল হইবে, তাহা আর বিচিত্র কী। কিন্তু একটি বিষয়ে কোনও তর্ক থাকিতে পারে না। এমন একটি অন্তহীন সঙ্কটের কাহিনি যে রাজ্যে রচিত হইতে পারে, তাহার প্রশাসন, আর যাহাই হউক, প্রকৃষ্ট শাসনে সক্ষম নহে। প্র-শাসনের দায় মিটাইতে তাঁহাদের ব্যর্থ হইবার অনেক কারণ থাকিতে পারে, কিন্তু ব্যর্থতার সত্য তাহাতে মিথ্যা হইয়া যায় না।

Advertisement

সন্দেহ নাই, প্রশাসনের কাজ কঠিনতর করিয়া দিয়াছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের, অন্তত তাঁহাদের একাংশের, অনমনীয়তা। প্রশাসনের প্রতি তাঁহাদের ক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে। শাসকরা তাঁহাদের সমস্যার কথা যথেষ্ট সহৃদয়তার সহিত বিবেচনা করিয়া অভিভাবকসুলভ স্নেহে ও সহমর্মিতায় তাঁহাদের পাশে দাঁড়ান নাই বলিয়া তাঁহাদের তীব্র অভিমান অস্বাভাবিক নহে, সেই অভিমান হইতে বিরূপতা সঞ্জাত হওয়াও প্রত্যাশিত। কিন্তু সরকার যতই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হউক, তাহা ব্যক্তি নহে, প্রতিষ্ঠান। যাঁহারা চালাইতেছেন তাঁহাদের প্রতি যত বিরাগ বা অবিশ্বাসই থাকুক, সরকারকে তাহার প্রাপ্য মর্যাদা দিতেই হইবে। প্রশাসনের সহিত আলোচনার বিষয়বস্তু কী হইবে বা সেই আলোচনায় আন্দোলনকারীদের তরফে কয় জন থাকিবেন, কাহারা থাকিবেন, এই সব বিষয়ে তাঁহাদের দাবিদাওয়া থাকিতেই পারে, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সম্মুখে অর্থাৎ কার্যত জনসমক্ষে আলোচনা করিতেই হইবে, এমন দাবি কার্যত প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। মুক্ত আলোচনা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, কিন্তু এমন একটি জটিল বিবাদের মীমাংসার জন্য যে আলোচনা, তাহা জনসমক্ষে চালানো কতটা সম্ভবপর বা সমুচিত, তাহা লইয়া বড় রকমের প্রশ্ন আছে। ‘জনতার আদালত’ বসাইয়া আলোচনা করিবার বিচিত্র দাবি আঁকড়াইয়া বসিয়া না থাকিলেই আন্দোলনকারীরা সুবিবেচনার পরিচয় দিবেন।

তবে সমস্যা যত জটিলই হউক, একটি প্রশ্নে আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করা অত্যাবশ্যক। তাহার নাম চিকিৎসা। সহজ কথা সহজ করিয়া বলিলে— ঢের হইয়াছে, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার কাজ এই মুহূর্তে একশো শতাংশ চালু করা প্রয়োজন, এবং চালু করা উচিত। জটিল সমস্যার সমাধানের আলোচনায় বিলম্ব অস্বাভাবিক নহে। সঙ্গত জটিলতা বা অসঙ্গত অহঙ্কারের কারণে সেই আলোচনা দীর্ঘতরও হইতে পারে। কিন্তু কবে দুই পক্ষের দ্বৈরথ শেষ হইবে, কবে তাঁহারা সন্তুষ্ট হইয়া পরস্পর হাত মিলাইবেন, চিকিৎসাপ্রার্থীরা সেই আশায় বসিয়া থাকিবেন— ইহা চলিতে পারে না। কোন রাজ্যে বা কোন দেশে ডাক্তাররা কত ধর্মঘট করিয়াছেন, ধর্মঘটের মধ্যে কোন হাসপাতালে কতটা চিকিৎসা হইতেছে— এই সকল হিসাব সম্পূর্ণ অবান্তর, চিকিৎসা এমন একটি পরিষেবা যাহা এক আনা বন্ধ রাখাও অনৈতিক। চিকিৎসকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমাজের প্রবল সমর্থন আছে, তাহা এই কয় দিনে সুস্পষ্ট। সেই দাবি আদায়ে তাঁহাদের পাশে থাকিবার দায়ও সমাজকে স্বীকার করিতে হইবে, প্রয়োজনে প্রশাসনের সহিত সে জন্য সমবেত আলোচনা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শামিল হইতে হইবে। কিন্তু আরও বেশি করিয়া সেই কারণেই— সমাজকে পাশে রাখিবার স্বার্থেই— চিকিৎসকরা অবিলম্বে পূর্ণোদ্যমে চিকিৎসা শুরু করুন। সেটাই তাঁহাদের কাজ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement