গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে করনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। আগামী বাজেটে কি অর্থমন্ত্রী পারবেন এই ভূমিকা পালন করতে? এটা ঠিকই যে, করনীতি একক ভাবে এই দায় পালন করতে পারে কি না, তা একটা বিতর্কিত বিষয়। অনেকেই বলছেন, দেশের বর্তমান বেহাল অবস্থার পিছনে রয়েছে আর্থিক কাঠামোর বৈষম্য। তাই শুধু করনীতির জায়গা থেকে অর্থনীতির উল্টো-রথকে সোজা রাস্তায় হাঁটানো সম্ভব কি না, সেটাও কিন্তু ভাবার আছে। এই বিতর্ক অবশ্য কঠিন অর্থনীতির যুক্তির অংশ, যা আলোচনার পরিসর এটা নয়। যেটা মনে রাখতে হবে, তা হল এ ব্যাপারে করনীতি বা বাজেটের একটা ভূমিকা থাকবেই, কিন্তু তা কতটা সার্বিক তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ তৈরি হয়ে গিয়েছে।
তবে একটা ব্যাপার কিন্তু উঠেই আসছে এই প্রসঙ্গে। সাম্প্রতিক বাজেটগুলিতে একটা প্রবণতা খুব স্পষ্ট। ‘Last mile connectivity’— এই শব্দবন্ধটি খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে সাধারণের কাছেও। এবং তা হয়েছে এই সব বাজেটের কারণেই। বাজেটের বরাদ্দ প্রসঙ্গেই বারে বারে উঠে এসেছে ইংরাজির এই শব্দবন্ধ। বাংলায় করলে বোধহয় তা দাঁড়াবে ‘দোড় গোড়ায় সুযোগ’। উদাহরণ, দরিদ্র মহিলাদের জন্য পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। একই সঙ্গে কিন্তু এর রাজনৈতিক লক্ষ্যও আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। যেটা লক্ষ্যনীয় সেটা হল ভোটের রাজনীতিতে করনীতির বৃহত্তর লক্ষ্য হারিয়ে যাওয়া।
আরও পড়ুন: দেশের সমৃদ্ধি কি নিয়মের ফাঁসে আটকে গেল?
বাজেটের মূল লক্ষ্য এই চাপে বোধহয় হারিয়ে গিয়ে আর্থিক বৃদ্ধিকে পাশে রেখে, বৃহত্তর আর্থিক প্রগতির রাস্তা এড়িয়ে, ক্রমাগত জনমোহিনী নির্বাচন প্রতিশ্রুতিমুখী হয়ে উঠেছে। যেখানে গিয়ে সাম্য ও আয় বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কিন্তু বরাদ্দে সেই কথা রাখার প্রমাণ মিলছে না। যেমন কৃষকের আয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি। এখানেও কিন্তু বরাদ্দ বা সেই লক্ষ্য কী ভাবে ছোঁয়া যাবে তার কোনও নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ চিন্তার প্রমাণ মিলছে না।
যদি বৃদ্ধির রাস্তায় ফিরতে হয়, তা হলে কিন্তু এই বিষয়গুলি নিয়ে স্বচ্ছ আলোচনার পরিসর তৈরি হওয়া জরুরি। নোটবন্দির মতো নৈতিক সিদ্ধান্তের বিচ্যুতি এবং তার শোধরানোর জায়গা তৈরি হওয়া জরুরি। এই নিয়ে কোনও গভীর আলোচনা কিন্তু গীতা গোপীনাথের আলোচনার বাইরে সে ভাবে আমরা এখনও পাইনি। এঁদের গবেষণাতেই একমাত্র আর্থিক বৃদ্ধির উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা পেয়েছি।
আরও পড়ুন: বাজেটের গুরুত্ব কিন্তু ক্রমশ কমে যাচ্ছে
মোদ্দা কথা হল স্বচ্ছতা। বাজেটে স্বচ্ছতা আনার জন্য কিন্তু সিএজি-র অডিট এবং তা নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় আলোচনার ব্যবস্থা আছে। এই আলোচনা কিন্তু খুব জরুরি। যেমন জরুরি— ভুল স্বীকার করে তা শোধরানোর ব্যবস্থা করা। জরুরি বার্ষিক কর নীতির পাশাপাশি মধ্যমেয়াদী করনীতি তৈরি করা, যাতে আর্থিক নীতি টেকসই হয়, আরও স্বচ্ছ হয় এবং সাধারণের মধ্যে নীতি নিয়ে একটা গভীর আস্থার জায়গা তৈরি হয়।
(লেখক অর্থনীতিবিদ এবং এনআইপিএফপি-র শিক্ষক)
(এই লেখাটি তিন কিস্তির। এটি শেষ কিস্তি।)
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ