রবীন্দ্রপল্লির বাড়িতে সুকুমারী সাহা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
বাস্তব অনেক সময়ে গল্প-উপন্যাসের চেয়ে বেশি বিস্ময়কর— খুব বিখ্যাত আপ্তবাক্য। অনেকেই পরিচিত এই বাক্যবন্ধের সঙ্গে। কিন্তু অনেকেই আমরা বুঝতে পারি না, এ বাক্য কখন আমাদের নিজেদের জীবনেই সত্য হয়ে ওঠে। দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানের সাহা পরিবার যেমন পারেনি।
অশীতিপর এবং গুরুতর অসুস্থ মা সুকুমারী সাহার দেখভালের জন্য বাড়িতে দু'বেলাই নার্স ও আয়ার বন্দোবস্ত রেখেছিলেন ছেলে উত্তম সাহা। কিন্তু শয্যাশায়ী সুকুমারী সাহার গায়ে মাঝেমধ্যেই কালশিটে দেখা যাচ্ছিল। নার্স জানাচ্ছিলেন, পাশ ফিরে শুতে গিয়ে খাটের রেলিঙের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছেন সুকুমারী, তা থেকেই বার বার কালশিটে পড়ছে। মুখেও যখন কালশিটের দাগ ফুটে উঠল, আর নার্সের কথায় ভরসা রাখেনি সাহা পরিবার। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে। তাতেই ধরা পড়ছে সুকুমারীকে নার্সের মারধরের ছবি।
সেবা যাঁর পেশা, রোগীর দেখভাল করে যাঁর জীবিকা নির্বাহ হয়, অসুস্থ প্রবীণার সুশ্রুষার জন্য যাঁকে রাখা হয়েছে, তিনি পরিজনদের অলক্ষ্যে প্রবীণাকে রোজ মারধর করছেন! এটা ভাবা যাবে কী ভাবে? এমনটা বা এর সঙ্গে তুলনীয় কিছু যে ঘটছে, তা কারও মাথায় আসবে কী ভাবে? বিস্ময়টা সেখানেই। জীবনের বাস্তবতা চমকে দিচ্ছে সেখানেই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এ চমক কোনও ইতিবাচক চমক নয়। এই বিস্ময় যারপরনাই ব্যথিত করছে, আশঙ্কিত করছে। কোথায় কার সঙ্গে কী বিশ্বাসঘাতকতা ঘটে যাচ্ছে, জীবনের কোন ক্ষেত্রটায় অপ্রত্যাশিত ভাবে কেউ মনুষ্যত্বের নির্মম হত্যা ঘটাচ্ছে, আদৌ কি জানতে পারছি আমরা? সাহাবাড়ির সিসিটিভি ফুটেজটা দেখার পর এই রকম প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করছে মনে। বিশ্বাসের স্বাভাবিক ভিতটা কেমন নড়বড়ে ঠেকছে।
আরও পড়ুন: বৃদ্ধাকে চুলের মুঠি ধরে মার, গাঙ্গুলিবাগানের বাড়িতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার নার্স
সাহা পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত নার্সকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই অপরাধের কঠোর প্রতিবিধান যাতে হয়, সেটাও এ বার পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। মনুষ্যত্বের এমন বিস্ময়কর হনন কোনও তুচ্ছ বিষয় কিন্তু নয়। দৃষ্টান্তমূলক প্রতিবিধান জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ আবার এই একই পন্থায় চমকে দিতে না পারে কোনও পরিবারকেই।