বিধি ভেঙে সব আসনেই যাত্রী। খড়্গপুর শাখার লোকাল ট্রেনে। নিজস্ব চিত্র
কালীপুজোর আগেই করোনা আবহে চালু হয়েছিল লোকাল ট্রেন পরিষেবা। গোড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে কার্যত ফাঁকাই চলছিল লোকাল। অবশ্য উৎসবের মরসুম কাটতেই ভিড় উপচে পড়ছে। করোনা বিধিও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মুখোমুখি ৩জনের আসনে বসছেন ৬জন যাত্রী!
সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনে খড়্গপুর স্টেশনের ছাড়ার পরই ঠাসা ভিড় দেখা গিয়েছে আপ ও ডাউন লোকাল ট্রেনগুলিতে। সকালে ব্যস্ত সময়ে অধিকাংশ লোকাল ট্রেনে ছিল ভিড়। বিশেষ করে মেদিনীপুর-হাওড়া লোকালে ভিড় দেখা গিয়েছে। খড়্গপুর স্টেশনে ট্রেন পৌঁছতেই করোনা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই যাত্রীরা লোকালে উঠেছেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণে রেলের পক্ষ থেকে আরপিএফ বা রাজ্যের রেল পুলিশের তরফে পর্যাপ্ত কর্মীও দেখা যায়নি। প্ল্যাটফর্মে ঘুরতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের রেল পুলিশের একজন মাত্র সিভিক ভলান্টিয়ারকে। এমন অব্যবস্থায় ক্ষোভে ফুঁসছে নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের দাবি, বাড়াতে হবে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা। যদিও রেল দায় চাপাচ্ছে যাত্রীদের ঘাড়ে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “প্রয়োজন থাকলে নিশ্চয়ই ট্রেন বাড়বে। তবে জন সচেতনতা প্রয়োজন। আমরা জন সচেতনতা বাড়াতে সবরকম চেষ্টা করছি।”
অবশ্য যাত্রীরা বলছেন অন্য কথা। তাঁদের দাবি, আনলক-পর্বে নিত্যযাত্রীদের অসুবিধার মুখে পড়তে হওয়ায় লোকাল ট্রেন চালুর দাবি উঠেছিল। এপর্যাপ্ত লোকাল ট্রেন চালুর কথাও বলেছিলেন নিত্যযাত্রীরা। অবশ্য সে সবে গুরুত্ব না দিয়ে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে করোনা বিধি মেনে কম সংখ্যক লোকাল ট্রেন চালু করে রেল-রাজ্য। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। কালীপুজোর আগে লোকাল ট্রেন চালু হলেও কার্যত ফাঁকা ছুটেছে। কিন্তু এ বার উৎসব শেষ হতেই ভিড় বাড়ছে। খড়্গপুর-মেদিনীপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক জয় দত্ত বলেন, “আমরা তো আগেই আশঙ্কা করেই প্রথম পর্যায়ে লোকালে যাচ্ছিলাম না। তখন ফাঁকা ছিল। কিন্তু এখন উৎসব শেষ হতে আমাদের নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীরাও লোকালে উঠছে। ঠাসাঠাসি করে বসে অথবা দাঁড়িয়েও যাত্রীরা লোকালে যাচ্ছেন। রেলের এই উদাসীনতার প্রতিবাদে এ বার আমরা ডিআরএম অফিস অভিযান করব।”
নিত্যযাত্রীরা ছাড়াও নানা প্রয়োজনে ট্রেনে এখন খড়্গপুর-হাওড়া, মেদিনীপুর-হাওড়া শাখায় যাতায়াত করছে বহু যাত্রী। প্রথম থেকেই করোনা বিধি মেনে মাস্ক পড়া, দূরত্ব বিধি বজায়ে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গিয়েছিল। তা কার্যকর করতে রেলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। এখন করোনা বিধি লঙ্ঘনের সেই ছবির সঙ্গেই ভিড়ের ছবি স্পষ্ট হচ্ছে। কাটা চিহ্নের আসনেও বসছে যাত্রীরা। লোকালের মুখোমুখি আসনে ৩জনের বদলে বসছে ৬জন যাত্রী। অথচ দেখার কেউ নেই। বাগনান থেকে খড়্গপুরে এসেছিলেন ঘরের অন্দরসজ্জার কাজে যুক্ত রাজু মান্না ও চিরঞ্জিত আদক। তাঁরা বলেন, “সকালে আসার সময় ও দুপুরে ফিরে যাওয়ার সময় দেখছি লোকাল ট্রেনে ভালই ভিড় হচ্ছে। কাটা চিহ্নের আসনেও যাত্রীরা বসছেন। ভয় হলেও বাধ্য হয়েই লোকালে যাতায়াত করছি।” ভিড়ের কথা স্বীকার করছেন খড়্গপুরের স্টেশন মাস্টার দেবেন্দ্রকুমার পণ্ডা। তিনি বলেন, “এখন তো দেখছি ট্রেনে ভালই ভিড় হচ্ছে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে নিশ্চয় বোর্ড বিবেচনা করবে।”