Coronavirus Lockdown

বৃহত্তর দায়িত্ব

আপাতত সরকারের কর্তব্য রাজপথে যথাসম্ভব বাসের ব্যবস্থা করা। যত সরকারি বাস আছে, তাহা পথে নামাইতে হইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ০০:০১
Share:

ছবি পিটিআই।

লকডাউনের শর্ত শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পথের দুর্গতি অশেষ হইয়াছে। দফতর খুলিয়া গিয়াছে, ফলে মানুষকে বাহির হইতে হইতেছে। অথচ, রাস্তায় বাসের অকুলান। অধিকাংশ বেসরকারি বাসমালিকই এখনও হরেক অজুহাতে বাস পথে নামান নাই। যখন বাসে সর্বাধিক ২০ জন যাত্রী বহনের শর্ত ছিল, তখন তাঁহারা পড়তায় না পোষাইবার যে যুক্তি খাড়া করিতেছিলেন, এখন যে সেই অজুহাতটি অব্যবহার্য— এই কথাটি তাঁহারা মানিতে নারাজ। গত আড়াই মাস বসিয়া থাকায় তাঁহাদের লোকসান হইয়াছে, সত্য। কিন্তু, তাঁহাদের কিছু সামাজিক দায়িত্বও আছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যহ যে হয়রানি হইতেছে, তাহা দেখিয়াও তাঁহারা ‘ভাড়া না বাড়াইলে বাস চালাইব না’-র জেদে অটল থাকিলে অবস্থানটি ঘোরতর অনৈতিক। তাহাকে রাজ্য সরকারের হাত মুচড়াইয়া নিজেদের দাবি আদায় করা বলে। এই পরিস্থিতিতে যে এহেন অবস্থান গ্রহণ করা চলে না, তাহা বাসমালিকদের বুঝিতে হইবে। অতিমারির ফলে প্রত্যেকে ক্ষতিগ্রস্ত, এবং সেই ক্ষতি মানিয়াই সমাজ স্বাভাবিকতায় ফিরিতে চাহিতেছে। বাসমালিকরাও নিজেদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করুন, পরিস্থিতি স্বাভাবিকতর হইলে ভাড়া প্রসঙ্গে আলোচনায় বসা যাইবে।

Advertisement

তবে, এই কথাটিও স্বীকার করিতে হইবে যে এই রাজ্যে বেসরকারি বাসের ভাড়াবৃদ্ধির প্রশ্নটি সর্বদাই রাজনৈতিক। তেলের দাম বা বাস চালাইবার খরচের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পায় জনমানসে ভাড়াবৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার প্রশ্নটি। ফলে, রাজ্যে বাসভাড়া বৃদ্ধির কোনও স্বতন্ত্র, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া গড়িয়া উঠে নাই। অথচ, কাজটি জটিল নহে। একটি সূচক প্রস্তুত করা প্রয়োজন, যাহাতে ডিজ়েলের দাম-সহ বাস চালাইবার যাবতীয় খরচের বাড়া-কমার প্রতিফলন ঘটিবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সেই সূচক অনুসারে ভাড়া নির্ধারিত হইবে— এমন একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করিলেই সমস্যা থাকিত না। তাহা হইলে, বাসমালিকদের বর্তমান ক্ষোভ এবং দাবির অনৈতিকতা স্পষ্টতর হইত।

আপাতত সরকারের কর্তব্য রাজপথে যথাসম্ভব বাসের ব্যবস্থা করা। যত সরকারি বাস আছে, তাহা পথে নামাইতে হইবে। বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠনের সহিতও নিরন্তর আলোচনা চালাইয়া যাইতে হইবে যাহাতে তাঁহারা নিজেদের অনৈতিক জেদটি ছাড়িয়া বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা ভাবেন। কিন্তু, তাহাও কি যথেষ্ট হইবে? যদি না হয়, সরকারের হাতে আর একটি উপায় অবশিষ্ট থাকিবে— যত বাস প্রয়োজন, ততগুলি বেসরকারি বাস সাময়িক ভাবে অধিগ্রহণ করিতে হইবে। তাহার পর সেই বাসগুলিকে সরকারি বাসের ন্যায় চালাইতে হইবে। গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে সচল করিতে এই মুহূর্তে সরকারি ভর্তুকি আবশ্যক। তাহা সরকারি বাসের মাধ্যমে হইলেই ভাল, কারণ এক বার বেসরকারি বাসমালিকদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা হইলে তাহা প্রত্যাহার করা সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক ভাবে মুশকিল হইবে। নষ্ট করিবার মতো সময় এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নাই। লকডাউন শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়িবার সম্ভাবনাও প্রকটতর। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখিবার সুযোগটুকু মানুষকে দিতেই হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement