Editorial News

একে আদৌ পরিষেবা বলা যাবে তো?

বেলাগাম সার্জ প্রাইসের আগুনে হাত পুড়ছিল এমনিতেই। তার মধ্যেই সামনে এল চালকের হাতে যাত্রীর চূড়ান্ত হেনস্থার অভিযোগ। কলকাতার অ্যাপ ক্যাবকে আর ‘পরিষেবা ’বলা যাবে কি? প্রশ্ন ওঠার উপক্রম হয়েছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০১:০০
Share:

ভাড়া যে স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়, একটি অ্যাপ ক্যাপ সংস্থা তা স্বীকারও করেছে। ছবি: সংগৃহীত।

উদরাময়ে কাহিল রোগী, তার মধ্যেই আবার চেগে উঠল পুরনো গেঁটে বাত। পরিস্থিতি কতটা সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে আঁচ করা যাচ্ছে নিশ্চয়ই। কলকাতার অ্যাপ ক্যাপ পরিষেবাতেও যেন ওই রকমই উপর্যুপরি সঙ্কট।

Advertisement

বেলাগাম সার্জ প্রাইসের আগুনে হাত পুড়ছিল এমনিতেই। তার মধ্যেই সামনে এল চালকের হাতে যাত্রীর চূড়ান্ত হেনস্থার অভিযোগ। কলকাতার অ্যাপ ক্যাবকে আর ‘পরিষেবা ’বলা যাবে কি? প্রশ্ন ওঠার উপক্রম হয়েছে।

কলকাতায় রাস্তায় নিয়ত ছুটে বেড়াচ্ছে যে সব সংস্থার অ্যাপ ক্যাব, তাদের ভাড়া কাঠামো নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। ক্যাবের চাহিদা বাড়লেই চড়-চড় করে বাড়তে থাকে রাইড-দর। দুর্যোগের দিন হলে তো কথাই নেই, ক্যাব সংস্থার পৌষ মাস যেন। ঝোপ বুঝে দেদার কোপ। এক কথায় ভাড়া বেলাগাম। ভাড়ার কাঠামো চূড়ান্ত অস্বচ্ছ। কোন নীতি মেনে ভাড়া স্থির হয় বা ওঠা-নামা করে, বিন্দুমাত্র জানা নেই গ্রাহকের। জানা নেই প্রশাসনেরও।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

অভিযোগ স্বাভাবিক কারণেই পৌঁছেছিল সরকারের দরবারে। পরিবহণ দফতর ভাড়া নীতি সংক্রান্ত বিশদ তথ্য চেয়েছিল অ্যাপ ক্যাপ সংস্থাগুলির কাছ থেকে। ভাড়া যে স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়, একটি সংস্থা তা স্বীকারও করেছে। কিন্তু কোন নীতি মেনে এমনটা হয়,কীসের ভিত্তিতে এ ভাবে ভাড়া ওঠা-নামা করে, যাত্রীর কাছ থেকে যে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়, সে অর্থ কার ভাগে যায়— এমন নানা প্রশ্নও সরকারের তরফ থেকে রাখা হয়েছিল। স্বচ্ছ বা স্পষ্ট জবাব মেলেনি।

এর মধ্যে আবার উঠে এসেছে পুরনো অভিযোগটা। অ্যাপ ক্যাবে যাত্রীকে হেনস্থা করার অভিযোগ চালকের বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে। কখনও দুর্ব্যবহার, কখনও মারধর, কখনও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে এসেছে। এ বার এক মহিলা যাত্রী অভিযোগ করলেন, তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করছিলেন চালক।

আরও পড়ুন: তিন গুণও হয় ভাড়া, উত্তর এল ক্যাব সংস্থার

আরও পড়ুন: কলকাতার রাস্তায় মহিলা যাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা, গ্রেফতার উবর চালক

যে রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার কথা ছিল অ্যাপ ক্যাবটির, সে রাস্তায় না গিয়ে অন্য দিকে গাড়ি ঘুরিয়েছিলেন চালক, অভিযোগ তেমনই। ট্যাংরা এলাকায় পৌঁছে মহিলা যাত্রী ক্যাবের ভিতর থেকেই চিৎকার শুরু করেন, স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন সাহায্যে। অভিযোগ এমনই। অভিযুক্ত চালক এখন পুলিশ হেফাজতে। কিন্তু অভিযোগটা মারাত্মক। অপহরণের চেষ্টা হচ্ছিল বলে যে যাত্রী অভিযোগ করলেন, রাস্তায় যদি তিনি কোনও লোকজন দেখতে না পেতেন, তা হলে কি চি়ৎকার করেও লাভ হত? সে ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটতে পারত ওই যাত্রীর সঙ্গে? ভাবলেই অস্বস্তি বাড়ে, অ্যাপ ক্যাব সম্পর্কে আতঙ্ক তৈরি হয়।

তা হলে কেমন দাঁড়াল কলকাতার অ্যাপ ক্যাব ‘পরিষেবার’ ছবিটা? সুযোগ পেলেই বিপুল দর হেঁকে যাত্রীর ঘাড় মটকানোর অপেক্ষায় অ্যাপ ক্যাব সংস্থা, সে সব উপেক্ষা করেও কেউ যদি উঠেই পড়েন অ্যাপ ক্যাবে, তা হলে হেনস্থা বা মারধর বা অপহরণের মুখে পড়ার আশঙ্কা অনেকখানিই রয়েছে, তবে গন্তব্যে পৌঁছনোর নিশ্চয়তা একশো শতাংশ নেই। এই রকম ভাবমূর্তি নিয়ে কি কোনও পরিষেবা চলে? যাত্রীর নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য, সন্তুষ্টি সুনিশ্চিত করা অ্যাপ ক্যাব সংস্থার অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। কলকাতার অ্যাপ ক্যাবে কোনটিই কি সুনিশ্চিত? প্রশ্নচিহ্নটা খুব বড় হয়ে উঠছে দিন দিন। তাই আবার প্রশ্ন করতে হচ্ছে, কলকাতার অ্যাপ ক্যাবকে ‘পরিষেবা’ হিসেবে গণ্য করা যাবে কি না?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement