বঙ্গ রাজনীতিতে জয়রাম রমেশ যে এমন ঝড় তুলে দেবেন কে জানত! কংগ্রেস দলে, পি ভি নরসিংহ রাও থেকে মনমোহন সিংহের সরকারে বহু গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাঁকে নিয়ে এমন চর্চা হয়নি, যা গত দু’মাস ধরে হয়েছে। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা হবে কি না, তা নিয়ে টানাপড়েন। এক দিকে অধীর চৌধুরী নিয়মিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে গিয়েছেন। অন্য দিকে, জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র হিসাবে জয়রাম রমেশ বলেছেন, কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে আসন-সমঝোতা করতে চায়। তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসকে যতই দুচ্ছাই করুন, জয়রাম রমেশের তৃণমূল প্রীতি কমেনি। তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি হলে বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। প্রশ্ন হল, জয়রামের এই তৃণমূল-প্রীতির কারণ কী? জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, তিনি আসলে কংগ্রেসের কৌশল মেনেই বিবৃতি দিয়ে গিয়েছেন। তৃণমূল আসন রফায় রাজি না হলেও জোট ভাঙার কোনও দায় কংগ্রেস নিতে চায়নি। মমতা কংগ্রেসকে শাপশাপান্ত করলেও জয়রাম বলেছেন, তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের সঙ্গেই আছে। এ হল, ‘তা বলে কি প্রেম দেবে না, যদি মারি কলসির কানা’ নীতি!
রাহুল গান্ধী ও জয়রাম রমেশ।
রাজীব জমানায় রমেশ, স্যাম পিত্রোদা।
সিএএ বিতর্ক উস্কে
দীর্ঘ চার বছর পরে গত সোমবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। গোড়া থেকেই আশঙ্কা, ওই আইনের ফলে মুসলিমদের একাংশকে দেশ ছাড়তে হবে। যদিও সরকারের দাবি, এর ফলে কারও নাগরিকত্ব যাবে না। উল্টে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আইনটি কী ভাবে মুসলিমদের জন্য উপকারী, তা ব্যাখ্যা করে ভরসা দিতে ‘পজ়িটিভ ন্যারেটিভ ফর সিএএ’ বলে কিছুটা তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিষয়টি বিস্ময়কর! কারণ, সাধারণত এ ধরনের তথ্য সাংবাদিকেরা কোনও সূত্র থেকে জানতে পারেন। অথচ, এ ক্ষেত্রে সেই তথ্য সরকারি ভাবে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করা হয়। বিতর্ক শুরু হলে প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টা পরে ওয়েবসাইট থেকে ওই তথ্য সরিয়েও দেওয়া হয়।
মন্ত্রীর পত্র
ভোট প্রচারের জন্য আজকের দিনে যখন সব নেতা সমাজমাধ্যম এবং তথ্যপ্রযুক্তির উপরই বেশি নির্ভরশীল, তখন কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ান কিন্তু ভরসা রাখছেন সেই কাগজ কলমেই! মুজফ্ফরনগর থেকে দু’বার লোকসভায় জয়ী এই নেতা দিস্তে দিস্তে চিঠি লিখতে শুরু করেছেন তাঁর এলাকার মানুষদের। তাঁর হাতে লেখা সেই চিঠি পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান থেকে নিরাপত্তী কর্মী, এমনকি এলাকার সেনাবাহিনীতে কর্মরত জওয়ানদের পরিবারেও। গত দশ বছরে বালিয়ান যে কাজ করেছেন তার খতিয়ান দিচ্ছেন চিঠিতে। লিখছেন সড়ক নির্মাণ এবং গরুদের জন্য পাকা গোয়াল তৈরির কথাও।
সেই ভুল
সভা: অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির আতিথ্য।
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বাড়িতে এলাহি আয়োজন। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, বিভিন্ন দলের সাংসদরা হাজির মধ্যাহ্নভোজনের নিমন্ত্রণে। উপস্থিত কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। সিঙ্ঘভিকে সবাই আগাম অভিনন্দন জানাচ্ছেন ফের রাজ্যসভায় সাংসদ হয়ে আসার জন্য। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হলেও তাঁকে ফের কংগ্রেস হিমাচল থেকে প্রার্থী করেছে। অভিনন্দন পেয়ে সিঙ্ঘভি বলছিলেন, “আগে রাজ্যসভা নির্বাচনটা তো হতে দিন!” কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন বলে বসলেন, “এই ভুলটাই করেছিলাম। হরিয়ানায় যখন আমাকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করা হল, অনেকের থেকে আগাম অভিনন্দন নিয়ে নিয়েছিলাম! তার পরে বিজেপি আমাকে হারিয়ে দিল।” শুনে একচোট হাসাহাসি। তখন কে জানত, হিমাচলের রাজ্যসভা নির্বাচনেও বিজেপি কংগ্রেস বিধায়কদের ভোট কেটে মনু সিঙ্ঘভিকে হারিয়ে দেবে!
শিখতে হবে
আমেরিকানদের ইংরেজি নিয়ে ব্রিটিশদের উন্নাসিকতার ইতিহাস শতাব্দীবাহিত। সেই বিতর্কে নতুন ধুয়ো দিলেন ভাষায় সুপণ্ডিত, প্রাক্তন কূটনীতিক তথা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমেরিকার কূটনীতিকদের ভারতের কাছে কী শেখার আছে? সবাইকে চমকে, নিরুত্তাপ কণ্ঠে জয়শঙ্করের জবাব, “একটু ভাল ইংরেজি বলা!” শুনে হাততালির বন্যা! বিদেশমন্ত্রী এও জানান, ‘ইন্ডিয়া’ নয়, তিনি চান অন্য রাষ্ট্র দেশকে ‘ভারত’ই সম্বোধন করুক।