আবদারে গানও গেয়েছিলেন কবি

৫ নভেম্বর সকালে, কাশিমবাজার স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে পাড়ি দেওয়ার আগে, রাজপ্রাসাদে বসে কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রদের আবদারে কবি নিজের কণ্ঠে গেয়ে শোনান, ‘‘ওই ভুবনমোহিনী....।’’

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩২
Share:

কাশিমবাজার রাজবাড়িতে সাহিত্য সম্মেলনে মধ্যমণি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফাইল চিত্র

সময়টা ১৯০৭ সালের মার্চ। প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন হয়েছিল বরিশালে। এক দিকে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলেন। অন্য দিকে সেই আন্দোলন দমনে ব্রিটিশরাজের পুলিশি পীড়ন। ফলে জেরবার বরিশাল। অনেক বাধাবিঘ্ন কাটিয়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ বন্ধু রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মধ্যস্থতায় প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজনের যাবতীয় দায় ভার নিলেন কাশিমবাজার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী।

Advertisement

ওই সময়ে ‘জাহ্নবী’ পত্রিকায় নলিনীরঞ্জন পণ্ডিতের দীর্ঘ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯০৭ সালের নভেম্বর মাসের ৩-৪ তারিখে কাশিমবাজার রাজবাড়িতে প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কবিকে ওই কশিমবাজার রাজবাড়িতে মোট চার দিন থাকতে হয়েছিল। চতুর্থ দিন, ৫ নভেম্বর সকালে, কাশিমবাজার স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে পাড়ি দেওয়ার আগে, রাজপ্রাসাদে বসে কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রদের আবদারে কবি নিজের কণ্ঠে গেয়ে শোনান, ‘‘ওই ভুবনমোহিনী....।’’

সাহিত্য সম্মেলনে ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ও বাংলার বাইরের সাহিত্যানুরাগী রাজা-মহারাজা ও সাহিত্যসেবীরা। তাঁদের সঙ্গে কবি ছবিও তুলেছিলেন। তখনও কবির নোবেল পাওয়ার বিষয়ে কোনও কল্পনা-জল্পনা তৈরি হয়নি। এমন এক সময়ে জন্মের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতা টউন হলে কবিকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।

Advertisement

সেই আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র। অর্থাভাবে ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এর কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবীন্দ্রনাথের আবেদনে সাড়া দেন মণীন্দ্রচন্দ্র। মহারাজার আর্থিক সহায়তায় ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ আলোর মুখ দেখে। জলকষ্টে বন্ধ হওয়ার মুখে বিশ্বভারতী। মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মধ্যস্থতার ভূমিকা নেন। লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের আর্থিক সহয়তায় বিশ্বভারতীর অস্তিত্ব রক্ষা পায়। দীর্ঘ ‘খরা’ কাটিয়ে জল এসেছিল বীরভূমের রুখু মাটিতে।

কবির পাশে থাকার সেই সব দিনের মতো কবি-প্রয়াণের দিনের কথা মনে আছে জেলার ইতিহাস গবেষক, বিরানব্বই বছরের বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তখন তিনি বহরমপুর শহরের সৈয়দাবাদ এলাকার হার্ডিঞ্জ স্কুল (এখন মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠ)-এর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

বাদল দিনে রেডিও থেকে ভেসে আসা ইন্দ্রপতনের খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছিল শহরের পথে। মুহূর্তে আকাশের মতোই বহরমপুর শহর বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। বিজয়বাবু বলেন, ‘‘কবিগুরুর প্রয়াণ সংবাদের বিষণ্ণতায় সারা বহরমপুর শহর যেন পিন পতনের নৈঃশব্দে গুটিয়ে গিয়েছিল। শহরের সব স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকশিক্ষিকার মৌন মিছিল সমবেত হয়েছিল শহরের গ্রান্ট হলের মাঠে। সেখানেই সম্মিলিত ভাবে বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement