Jamia Millia Islamia

জামিন-প্রশ্ন

আদালতের রায়ের উপর পূর্ণ আস্থা রাখিয়াও কয়েকটি প্রশ্নের অবকাশ থাকিয়া যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ০০:৩২
Share:

১০ এপ্রিল দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হইয়াছিলেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার গবেষক-ছাত্রী সফুরা জ়রগর। ১৫ এপ্রিল হইতে তিহাড় জেলে বন্দি তিনি। একাধিক বার জামিনের আবেদন করিয়াছেন, প্রতি বারই নামঞ্জুর হইয়াছে। ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত দিল্লি দাঙ্গার চক্রান্তের সহিত যুক্ত থাকিবার গুরুতর অভিযোগ তাঁহার বিরুদ্ধে। সফুরার বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন বা ইউএপিএ প্রয়োগ করা হইয়াছে, যাহা প্রধানত দেশবিরোধী চক্রান্ত রুখিবার হাতিয়ার। পুলিশ জানাইয়াছে, ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ এবং সড়ক অবরোধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন সফুরা। চাঁদ বাগেও নাকি উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়াছেন তিনি। ‘প্রাইমা ফেসি’ বা প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে আদালত সিদ্ধান্ত লইয়াছে যে এই রূপ অভিযোগ ভিত্তিহীন নহে।

Advertisement

আদালতের রায়ের উপর পূর্ণ আস্থা রাখিয়াও কয়েকটি প্রশ্নের অবকাশ থাকিয়া যায়। যে কোনও আধুনিক উদারবাদী সমাজে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়াই স্বাভাবিক। যে অভিযুক্ত জামিন পাইলে তদন্তের কাজে প্রভূত বাধা সৃষ্টি করিতে পারেন, অথবা অধিকতর অপরাধ করিতে পারেন, একমাত্র এমন অভিযুক্তের ক্ষেত্রেই জামিন নামঞ্জুর করা বিধেয়। সফুরা এক জন গবেষক, এবং রাজনৈতিক কর্মী। এই মুহূর্তে তিনি একুশ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বাও বটে। উপরন্তু তিনি পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজ়অর্ডার নামক অসুখে আক্রান্ত। এমতাবস্থায় তাঁহার স্বাস্থ্য লইয়া চিন্তিত হইবার কারণ আছে। উদ্বেগ বাড়াইয়াছে কোভিড-১৯। ইতিমধ্যেই দিল্লির তিনটি কারাগারে বন্দিদের ভিতর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়িয়াছে। এই পরিস্থিতিতে বয়স্ক, শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বাদের ঝুঁকি অধিক, তাঁহাদের ঘরের বাহির না হইবার পরামর্শ দিতেছে সরকার। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ব্যতীত সর্বত্রই জামিন মঞ্জুর বিধেয়, বিশেষত এই পরিস্থিতিতে।

সফুরার প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা উঠিয়া আসে। এপ্রিলের শেষার্ধে, যখন মাসব্যাপী লকডাউনে স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, তখন দিল্লি দাঙ্গার সূত্রে একের পর এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়াছে দিল্লি পুলিশ। কেবল লকডাউন পর্বেই পঞ্চাশের অধিক ব্যক্তিকে হেফাজতে লওয়া হইয়াছে। বহু ক্ষেত্রেই অভিযুক্তের পরিবারকে কিছু জানানো হয় নাই, আইনি সহায়তার তো প্রশ্নই নাই। ইহা সম্ভবত সমাপতন নহে যে এই সময়ে দিল্লিতে যত জনকে গ্রেফতার করা হইল, তাঁহারা প্রত্যেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধী। অতিমারি এবং তজ্জনিত লকডাউনের কারণে এখন দেশ জুড়িয়া অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। প্রশ্ন উঠিতে পারে, সরকার কি এই পরিস্থিতির সুযোগ লইতেছে? এক দিকে আদালতে জরুরি বিষয় ব্যতিরেকে সকল প্রকার শুনানি বন্ধ, অপর দিকে রাজনৈতিক জমায়েতও নিষিদ্ধ। সুতরাং, অভিযুক্তরা যেমন সহজে আইনি প্রক্রিয়ায় সুবিচারের সুযোগ পাইবেন না, তেমনই তাঁহাদের হইয়া রাজপথে ন্যায়বিচার দাবি করিবার জন্যও কেহ নামিবেন না। অনুমান করা চলে, বিরোধী স্বর দমন করিবার জন্য ইহা অপেক্ষা সুসময় কিছু হইতে পারে না। গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত উল্লঙ্ঘনের এই প্রক্রিয়া অতীব আশঙ্কাজনক। তীব্র সঙ্কটের ইঙ্গিত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement