Ram Mandir

প্রশ্নের মূল্য

নাগরিকের জন্য ইহা ভয়ানক সঙ্কট, সন্দেহ নাই। নিজের মত বলিতে পারিবার স্বাধীনতা তাঁহার কাছে বিলাসিতা নহে, নিজের স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষা করিবার একমাত্র অস্ত্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০০:৪৫
Share:

দেশের মানুষ যখন মহামারিতে মরিতেছে, তখন রামমন্দির প্রতিষ্ঠার কি প্রয়োজন ছিল? কোচবিহারে এমবিবিএস পাঠরত এক ছাত্র সমাজমাধ্যমে এই প্রশ্নটি লিখিয়াছিল। সেই ‘অপরাধ’-এ ওই ছাত্রের জুটিয়াছে প্রহার। অভিযুক্তদের দলীয় কর্মী বলিয়া স্বীকার না করিলেও জেলা বিজেপি নেত্রীর কথাটি লক্ষণীয়। তিনি বলিয়াছেন, রামমন্দির সম্পর্কে দেশের মানুষের আবেগ কাজ করিতেছে, তাই ছাত্রটির মন্তব্য অনভিপ্রেত। অর্থাৎ মারধরের প্রতি তাঁহার সমর্থন না থাকিতেও পারে, কিন্তু ছাত্রের মতপ্রকাশের অধিকারকে খারিজ করিতে তাঁহার আপত্তি নাই। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের ইহাই অবস্থান। প্রশ্ন করিতে হয়, গণতন্ত্রে রক্ষা করিবার ‘আবেগ’ কি বিজেপি দলটিতে একেবারেই নাই? শাসক দল রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করিয়া সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করিতে চাহিলে বিরোধী তাহার প্রতিবাদ করেন, সরকারকে বিরুদ্ধ মত শুনিতে বাধ্য করেন, ইহাই রীতি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের শাসনকালে সমালোচনা, প্রতিবাদ, বিদ্রুপের প্রতি শাসক দল তথা পুলিশ-প্রশাসন কত অসহিষ্ণু হইয়াছে, তাহার বহু নিদর্শন মিলিয়াছে। এমন সংঘাতে বিরোধীরা নাগরিকের পাশে দাঁড়াইবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। অথচ পশ্চিমবঙ্গের বাস্তব দেখাইয়া দিতেছে, সরকার যত বলে, বিরোধীরা বলেন তাহার শত গুণ! এমন করিয়া বলেন যে, কেহ নাগরিককে বাঁচাইবার থাকে না।

Advertisement

নাগরিকের জন্য ইহা ভয়ানক সঙ্কট, সন্দেহ নাই। নিজের মত বলিতে পারিবার স্বাধীনতা তাঁহার কাছে বিলাসিতা নহে, নিজের স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষা করিবার একমাত্র অস্ত্র। বহু সরকারি নীতি বা প্রকল্প, শাসক দলের বহু কর্মসূচি কোনও কোনও গোষ্ঠীর স্বার্থকে বিঘ্নিত করে, মর্যাদা লঙ্ঘন করে, জীবন ও জীবিকার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাঁহাদের এই সকল সমস্যা সম্পর্কে নীতি প্রণেতা বা কার্যসূচির রূপকারেরা অবগত, এমনও নহে। অনবধানতার কারণে বহু সঙ্কট তৈরি হইয়া থাকে। অতএব নাগরিক তাহা না জানাইলে, সংশোধনের জন্য জোর না করিলে, পরিবর্তন আসিবে কী প্রকারে? নাগরিকদের সংগঠিত বা ব্যক্তিগত আপত্তি শুনিতে নেতারা ও সরকারি কার্যকর্তারা দায়বদ্ধ। এই রাজ্যে শাসক ও বিরোধী, উভয়ই যেন সেই মৌলিক কথাটি ভুলিয়াছেন।

শাসকের অসহিষ্ণুতার সহিত ভারতীয় নাগরিক সমধিক পরিচিত। কিন্তু বিরোধীর এই দাপট, এই স্পর্ধিত অসহিষ্ণুতা— ইহার একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। তাহা মনে করাইয়া দেয়, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল বিজেপি আসলে দিল্লির শাসকের প্রশ্রয়ে এত দূর স্পর্ধিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই একটি ভয়ের শাসন তৈরি করিয়াছেন, এবং তাহার সপক্ষে এক প্রকার সামাজিক সমর্থনও তৈরি করিয়াছেন। দলিতের মর্যাদা, আদিবাসী অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা, যে কোনও বিষয়ে যুক্তিযুক্ত দাবিও তাঁঁহারা ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ কিংবা ‘সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যায় দাগাইয়া দেন। রামমন্দির কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশকারী ছাত্রকে মারধর তো স্বাভাবিক। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে তো বটেই, বিজেপি যে রাজ্যে বিরোধীর ভূমিকায়, সেখানেও তাহারা সংলাপে ও বিতর্কে অপারগ, বাহুবলে বিশ্বাসী। যে কোনও কর্মসূচির প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য তাহাদের দাবি। এই ভয়ঙ্কর অশনিসঙ্কেত এখন পশ্চিমবঙ্গের আকাশকে বিদীর্ণ করিতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement