Editorial News

হা-হুতাশ করেছি, মেধার সমাদর করতে পারিনি

পরিস্থিতি অত্যন্ত লজ্জাজনক আজ। এক দিনে এই অবস্থা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে অবহেলা-অযত্নের কারণে পরিস্থিতি এমন নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। মেধার বহির্গমন অনেক বছর ধরেই চলছিল। আমরা আক্ষেপ করেছি তা নিয়ে, কিন্তু রুখতে পারিনি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৫
Share:

মেধা চলে যাচ্ছে, আক্ষেপ শোনা যায়। এ রাজ্য থেকে মেধাবীরা পরিযায়ী হচ্ছেন বলে হা-হুতাশ শোনা যায়। কেন মেধার নির্গমন ঘটছে, তা কিন্তু অনেকেই তলিয়ে ভাবার চেষ্টা করি না। যদি বা কেউ তলিয়ে ভাবি, মেধাবীদের ধরে রাখার বৈধ উপায় আমরা খোঁজার চেষ্টা করি না।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন পদে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। বিএসসি, বি টেক, এম টেক-এর তো ছড়াছড়ি। পিয়ন পদের জন্য আবেদন করছেন এঁরা!

আমরা আঁতকে উঠছি আজ। কিন্তু আজ নয়, আরও অনেক আগে এই আঁতকে ওঠাটা জরুরি ছিল। উচ্চশিক্ষার মানের সঙ্গে যে দিন থেকে ভয়ঙ্কর আপসটা শুরু হয়েছিল, শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা যে দিন থেকে রূপ পেয়েছিল, তরুণ জনসংখ্যার মধ্যে দ্রুতবেগে বাড়তে থাকা উচ্চশিক্ষার হার যে দিন থেকে কর্মসংস্থানের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছিল, সেই দিনই আঁতকে ওঠা উচিত ছিল আমাদের। সেই মুহূর্তে বোঝার চেষ্টা করা উচিত ছিল, ভবিষ্যতটা কতখানি মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠতে পারে। যদি সে দিন আঁতকে উঠতাম, আজ আর পিয়ন পদের জন্য গবেষকের দৌড়ঝাঁপ দেখতে হত না।

Advertisement

মেধার জন্য শুধু হা-হুতাশ করলেই চলে না। মেধার সমাদর করতেও জানতে হয়। সে আমরা কতটুকু করেছি? প্রশ্নটা নিজেদেরই করা দরকার।

মেধাবী ছেলেমেয়ের অভাব নেই এ রাজ্যে। কিন্তু মেধার বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি জরুরি, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো জরুরি।

মেধার সমাদর বলতে আমরা কী বুঝি? প্রথমত, মেধার বিকাশের বন্দোবস্তকে বুঝি। দ্বিতীয়ত, মেধা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানকে বুঝি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মেধার বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো জরুরি। উচ্চশিক্ষার জন্য শ’য়ে শ’য়ে প্রতিষ্ঠান মাথা তুলেছে রাজ্য জুড়ে। কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পরিকাঠামো কেমন, মেধার বিকাশের সহায়ক বন্দোবস্ত কতটা রয়েছে, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের বা পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মানের সঙ্গে আমাদের রাজ্যে মাথা তোলা এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানের কোনও তুলনা আদৌ হয় কি না, আমরা খুব একটা খোঁজ নিয়ে দেখতে যাইনি। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ইতিউতি। কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠানে তীক্ষ্ণধী ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হয়, নাকি শুধু বি টেক বা এম টেক ডিগ্রি বিতরণ হয়, তা সে ভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। ফলে বাংলার ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য বেশ কিছু রাজ্যের পড়ুয়াদের থেকে পিছিয়ে পড়েছে।

কর্মসংস্থান তো আরওই দেওয়া যায়নি। না সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থান রয়েছে, না বেসরকারি উদ্যোগের বিপুল বিকাশ ঘটেছে এ রাজ্যে। অতএব, শিক্ষান্তে উপযুক্ত কাজ মিলবে, এমন নিশ্চয়তা বা প্রোত্সাহন পড়ুয়াদের অধিকাংশই পান না এ রাজ্যে।

আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিয়নের পদে বিটেক, এমটেক, গবেষকও প্রার্থী!

এ সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বহু দূর এগিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই, অনন্যসাধারণ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। কিন্তু সেটা সামগ্রিক ছবি নয়, পরিস্থিতি বিচারের মাপকাঠিও নয়।

পরিস্থিতি অত্যন্ত লজ্জাজনক আজ। এক দিনে এই অবস্থা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে অবহেলা-অযত্নের কারণে পরিস্থিতি এমন নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। মেধার বহির্গমন অনেক বছর ধরেই চলছিল। আমরা আক্ষেপ করেছি তা নিয়ে, কিন্তু রুখতে পারিনি। মেধাবীদের যে অংশ এখনও রয়ে যাচ্ছেন রাজ্যেই, তাঁদের জন্যও উপযুক্ত কর্মসংস্থান রাখতে পারিনি। অতএব, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যক্তি পড়াচ্ছেন, তিনি গবেষক। যে ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন হবেন, তিনিও হয়ত গবেষক।

এই মুহূর্ত থেকে অবস্থাটা উল্টো দিকে ঘোরাতে না পারলে, ভবিষ্যত্ আরও মেঘাচ্ছন্ন হবে। ভাবা দরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। একটু উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, একটু আঁতকে ওঠা দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement