অবিলম্বে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাস খুলিয়া দেওয়া হউক, এই দাবি শোনা গেল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের বাইরে অবস্থান-বিক্ষোভে বসিয়াছিল প্রতিষ্ঠানের এসএফআই শাখা। অনলাইন পঠনপাঠনে বহু ছাত্রছাত্রীর অসুবিধা, স্মার্টফোন বা দ্রুতগতির আন্তর্জাল-সংযোগের সঙ্গতিহীন বহু ছাত্রছাত্রী বৈষম্যের শিকার হইতেছে, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকতা চালু করিবার দাবি। একই দাবিতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মিছিল করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই শাখাও। তাহাদের বক্তব্য, স্বাস্থ্যবিধি মানা হউক, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন আর রুদ্ধদ্বার না থাকে, শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার ব্যবহারের সুযোগ মিলে।
দাবিগুলি অপ্রত্যাশিত নহে, কিছু ক্ষেত্রে ন্যায্যতাও অনস্বীকার্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যালয়, গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার খুলিবার দাবির সারবত্তা যথেষ্ট। এখনও অবধি পরিষ্কার সরকারি নির্দেশ শোনা যায়নি এই ব্যাপারে, তাই উপযুক্ত ব্যবস্থাও লওয়া হয় নাই। গ্রন্থাগারে দূরত্ব মানিয়া পড়ুয়াদের বসিবার ব্যবস্থা কিংবা গ্রন্থাগার হইতে নিয়মমাফিক বই ঘরে লইয়া যাইবার ব্যবস্থা করা কিন্তু কঠিন কাজ হইতে পারে না। যেখানে সিনেমা হল তাহার একশত শতাংশ আসনসংখ্যার সদ্ব্যবহারের সরকারি অনুমতি পাইয়াছে, সেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার কি দূরত্ববিধি মানিয়া খুলিতে পারে না? অনলাইন পড়াশোনা চলিতেছে, সেই কারণেই বিষয়গুলি সত্বর বিবেচনা করা উচিত।
শ্রেণিকক্ষ খুলিবার প্রশ্নটি অবশ্য অনেকটাই আলাদা। ছাত্রনেতাদের স্লোগান শুনিয়া বোধ হইতে পারে, নূতন বৎসরে অতিমারি চলিয়া গিয়াছে, তবু প্রশাসন বাবাজি দুষ্টামি করিয়া কলেজ খুলিতে দিতেছে না। পরিস্থিতি আদৌ এমন নহে। কোভিড-আতঙ্ক খানিক পিছু হটিতেছে, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ও হার ক্রমশ কমিতেছে— ঠিকই। কর্মক্ষেত্র হইতে শিল্প-সংস্কৃতির পরিসর এখন অনেকাংশে স্বাভাবিক, রাস্তাঘাটে যানজট ও মেলা-উৎসবে ভিড় লাগিয়াছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কোভিডের নূতন স্ট্রেন ভারতে আসিয়া পৌঁছাইয়াছে, এখনও টিকাকরণ যথেষ্ট শুরু হয় নাই, কোভিড হাসপাতালগুলিতে এখনও আসনের অসঙ্কুলান। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিয়া দিলে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের যেমন বাধ্যতামূলক ভাবে বাহিরে আসিতে ও একত্র হইতে বলা হয়, প্রশাসনের পক্ষে তাহা এখনও বিপজ্জনক ঠেকিলে তাহাকে দোষ দেওয়া যায় না। অনলাইন পঠনপাঠন চালাইবার কথা ভাবিতেছে বলিয়া কোনও প্রশাসনকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলা যায় না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কথা ভিন্ন— সেখানে শিক্ষাদানের সমগ্র ব্যবস্থাটির সহিত বিপুল অর্থের দায়ভার জড়িত, পরিকাঠামো অনেক উন্নত, ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশা এবং সক্ষমতার ধরনটিও সেখানে আলাদা, আপৎকালীন পরিস্থিতিতেও তাহাদের দ্বার না খুলিলে চলে না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকেও ক্রমে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত লইতে হইবে, হাত-পা গুটাইয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না। কিন্তু ছাত্রছাত্রী সমাজেরও বোঝা জরুরি, সমস্ত প্রশ্নের মীমাংসা অবরোধ, ধর্না, স্লোগানের মাধ্যমে হয় না। ধৈর্য এবং সংযমও জরুরি, বিশেষত অতিমারি পরিস্থিতিতে।