Cyclone Amphan

দুর্নীতি দুর্যোগ

ক্ষমতাবানের দুর্নীতির মূল্য চিরকাল বলহীন দরিদ্রকেই চুকাইতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০০:৫৬
Share:

সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হইতে ত্রাণ দিবে, কিন্তু ত্রাণের দুর্নীতি দুর্যোগ হইতে রাজ্যবাসীকে পরিত্রাণ দিবে কে? বিভিন্ন জেলার আমপান-বিধ্বস্ত গ্রামগুলিতে ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকা লইয়া বিক্ষোভ শুরু হইয়াছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রকৃত দুর্গতদের অনেকে বাদ পড়িয়াছেন, রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠরা অন্যায় ভাবে স্থান পাইয়াছেন। তালিকায় ঢুকিয়াছেন বিস্তর ভুয়া প্রাপকও। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এমন নালিশ নূতন নহে। যে কোনও সরকারি সহায়তার বিলিব্যবস্থায় স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠিয়া থাকে। তবে আমপান ত্রাণপর্বের বিশেষত্ব এই যে, দুর্নীতির অভিযোগ মানিয়া লইয়াছে রাজ্য প্রশাসন এবং শাসক দল। কোথাও প্রশাসনিক অধিকর্তাদের নির্দেশে গ্রাম পঞ্চায়েত অথবা পঞ্চায়েত সমিতির নেতারা অন্যায় ভাবে গৃহীত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ফিরাইতেছেন। কোথাও শাসক দল তৃণমূল বহিষ্কার করিয়াছে অভিযুক্ত নেতাকে। কোথাও ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকা ফের পরীক্ষা করিতে প্রশাসনিক কমিটি তৈরি করা হইয়াছে। এই উদ্যোগকে স্বাগত। কিন্তু দুর্ভাগ্য— নিরাশ্রয়, নিরন্ন মানুষের সহায়তায় বিলম্ব বাড়িতেছে। বহু ব্লকে সহায়তা-প্রার্থীদের তালিকা বাতিল করিয়া নূতন তালিকা তৈরি হইতেছে। অমূল্য সময় নষ্ট হইল। গৃহহীনদের কষ্ট দীর্ঘায়িত হইল, সরকারি ব্যবস্থার উপর অগণিত মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হইল। এই সকল ক্ষতির হিসাবও করিতে হইবে বইকি।

Advertisement

ক্ষমতাবানের দুর্নীতির মূল্য চিরকাল বলহীন দরিদ্রকেই চুকাইতে হয়। ইহা সমর্থকের প্রতি রাজনৈতিক দলের, নাগরিকের প্রতি প্রশাসকের দায়বদ্ধতার অভাব সূচিত করে। কিন্তু দুর্নীতির সম্ভাবনা রোধের প্রশাসনিক প্রস্তুতি থাকিবার কথা ছিল না কি? দশ বৎসর পূ্র্বে আয়লা ঝড়ের পরে ত্রাণ লইয়া দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠিয়াছিল। সম্প্রতি লকডাউনের সময়ে বিনামূল্যে রেশন বিতরণে দুর্নীতি লইয়াও যথেষ্ট শোরগোল উঠিয়াছে। তৎসত্ত্বেও প্রশাসনিক কর্তারা আমপান-ত্রাণে দলীয় পক্ষপাতিত্ব বা তস্করতা প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা গ্রহণ করেন নাই। সম্ভবত দুর্নীতির প্রতিকার করিবার রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগিবার জন্য অপেক্ষা করিয়াছেন। তাহার পরিণাম, তালিকায় গোলমালের জন্য ছয়-সাত জন বিডিওকে শোকজ় করা হইয়াছে। আমপান ত্রাণপর্বে এই নৈতিক বিচ্যুতির তাৎপর্য সামান্য নহে। দুর্নীতিতে নানা দলের নেতা জড়াইয়াছেন, কিন্তু শাসক দলের দায়ই অধিক।

মানিতে হইবে, ত্রুটি স্বীকার করিতে সাহসের প্রয়োজন। প্রশাসন বা রাজনৈতিক দলের তরফে যে দুর্নীতি চাপা দিবার চেষ্টা হয় নাই, স্বজনপোষণের দৃষ্টান্তগুলিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা বিরোধীর অপপ্রচার বলিয়া তাচ্ছিল্য করা হয় নাই, এমনকি সর্বদল কমিটি তৈরি করিয়া সকলের আলোচনার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্গঠনের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাইবার সিদ্ধান্ত হইয়াছে— এই দুঃসময়ে এমন রাজনৈতিক সহযোগিতা ও ভুলস্বীকারের দৃষ্টান্ত রাজ্যবাসীকে নিশ্চয় স্বস্তি দিতেছে। অন্যায় স্বীকার না করিলে তাহার প্রতিকার সম্ভব নহে। এক বৎসরের মধ্যে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী দলীয় দুর্নীতি স্বীকার করিলেন। গত বৎসর লোকসভা নির্বাচনের পরে তিনি একশত দিনের কাজের প্রকল্পে দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের দুর্নীতি স্বীকার করিয়াছিলেন। সেই বারেও দাবি উঠিয়াছিল, সরকারি প্রকল্প হইতে অন্যায় ভাবে গৃহীত টাকা ফিরাইতে হইবে নেতাদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তখন বহু তৃণমূল নেতা ‘কাটমানি’ ফিরাইয়াছিলেন। বৎসর না ঘুরিতে ফের বাড়ির ক্ষতিপূরণ, চাষের ক্ষতিপূরণের টাকা ফিরাইবার নির্দেশ দিতে হইল গ্রামের নেতাদের। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা স্পষ্টত প্রমাণিত। কিন্তু তাঁহার দলের ভাবমূর্তির উন্নতি ঘটিল না। দুর্ভাগ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement