politics. administration

পুলিশের ভূমিকা

স্নেহশীল জ্যাঠামহাশয়রা দুষ্ট বালকদের এমন ভাবেই বাগাড়ম্বর হইতে বিরত থাকিয়া, সংযমের সহিত আপন কাজ করিবার উপদেশ দিয়া থাকেন। কিন্তু পুলিশের আচরণকে  কেবল ‘ছেলেমানুষি’ ভাবিবার অবকাশ নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৩২
Share:

ছবি: পিটিআই।

নবীন পুলিশদের সতর্ক করিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলিয়াছেন, তাঁহারা যেন হিন্দি চলচ্চিত্রের ‘সুপারহিরো’ হইবার চেষ্টা না করেন। সিংহম ছবির মূল চরিত্রটির কথাটা মনে করাইয়াছেন মোদী, যাহার দাপটে দুষ্কৃতীরা থরহরিকম্প হইত। কাশ্মীরে মহিলা পুলিশদের মানবিক ব্যবহারের প্রশংসা করিয়া, সহৃদয়তা দিয়া মানুষের ভালবাসা আকর্ষণ করিতে উৎসাহ দিয়াছেন। উত্তম পরামর্শ, সন্দেহ নাই। স্নেহশীল জ্যাঠামহাশয়রা দুষ্ট বালকদের এমন ভাবেই বাগাড়ম্বর হইতে বিরত থাকিয়া, সংযমের সহিত আপন কাজ করিবার উপদেশ দিয়া থাকেন। কিন্তু পুলিশের আচরণকে কেবল ‘ছেলেমানুষি’ ভাবিবার অবকাশ নাই। পুলিশের সিংহম সাজিবার প্রধান আকর্ষণ, আইনের সীমায় আবদ্ধ থাকিবার দায় হইতে নিষ্কৃতি। অগণিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র এবং টিভি সিরিয়ালে পুলিশ প্রতিনিয়ত আইন ভাঙিয়া থাকে। বস্তুত এই ছবিগুলি দেখিলে যে কাহারও এই ধারণাই জন্মাইবে যে, থানার হাজতে কয়েদিকে নিষ্ঠুর ভাবে প্রহার করা পুলিশের নিয়মিত কর্তব্যের অন্যতম। পুলিশ চাহিলে যে কাহারও বাড়ি ঢুকিয়া খানাতল্লাশি করিতে পারে, কেবল সন্দেহের বশে যে কাহাকেও বন্দি করিতে পারে, স্বীকারোক্তি আদায় করিতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখাইয়া মৃত্যুর ভয় দেখাইতে পারে, এমনকি তাৎক্ষণিক বিচার দিবার উদ্দেশ্যে অভিযুক্তকে মারিয়া ফেলিতেও পারে। জনতা সেই ভ্রান্ত ধারণায় চিরপালিত বলিয়াই থানার হাজতে অথবা জেলে বন্দিমৃত্যুর সংবাদে শিহরিয়া উঠে না। গত বৎসর হায়দরাবাদে এক তরুণী পশুচিকিৎসকের গণধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত চার ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হইলে পুলিশ জনতার নিকট অভিনন্দিত হইয়াছিল।
যে পুলিশ মানবাধিকার কিংবা আইনকে পদপিষ্ট করিতে দ্বিধা করে না, তাহা কি শুধুমাত্র রুপালি পর্দার নির্মাণ? রাজনীতি এবং প্রশাসনের দায় নাই? নরেন্দ্র মোদী সরকার গুজরাতে ক্ষমতাসীন থাকিবার সময়ে ২০০২-২০০৬ সালের মধ্যে পুলিশের সহিত সংঘর্ষে অন্তত সতেরোটি হত্যার ঘটনা ঘটিয়াছিল। বিশেষত সোহরাবুদ্দিন শেখ এবং ইশরাত জাহানের হত্যার ঘটনা পুলিশ-প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া সংশয় গভীর করিয়াছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের শাসনকালে ‘এনকাউন্টার’ মৃত্যু একশো ছাড়াইয়াছে। প্রান্তিক এবং উপদ্রুত এলাকাগুলিতে অবশ্য পুলিশ সর্বদাই আইন হাতে লইতে এবং নাগরিক অধিকার নস্যাৎ করিতেই অভ্যস্ত।
এই সকল এলাকায় নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের কেহ কেহ পদোন্নতি ও নানা প্রকার সম্মান লাভ করিয়াছেন। ইহাও কি নবীন পুলিশের সিংহম হইবার প্রেরণা নহে? গণতন্ত্রে নির্বাচিত সরকার আইন প্রণয়নের অধিকার পাইয়াছে। কিন্তু আইনের মর্যাদা রক্ষা করিয়াছে কি? পুলিশের প্রধান কাজ, আইন মানিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। প্রশাসকের কাজ, পুলিশকে তাহার এই মৌলিক দায়িত্ব নির্বিঘ্নে পালন করিতে দেওয়া। পুলিশের কাজের পরিধি বিস্তারিত হইতে হইতে তাহার ‘সামাজিক দায়িত্ব’ এতই বাড়িয়াছে যে, তাহার প্রধান দায়িত্ব— তদন্ত ও অপরাধ প্রমাণ— ফাঁকি পড়িতেছে। ত্রাণ বিতরণ হইতে ফুটবল ম্যাচ সংগঠন, সকল কাজেই পুলিশ নিযুক্ত হইবে কেন? পুলিশ তাহার কুশলতা কাজে প্রমাণ করুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement