Abortion Law

ধর্মের নামে

বিভাজনের রাজনীতি, ধর্মকে কুক্ষিগত করিয়া নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে লাগাইবার কৌশল বিলক্ষণ জানেন ভারতীয় নাগরিক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০১:১৭
Share:

ছবি এএফপি।

করোনার প্রকোপ, পাঁচ জনের বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা, সব উপেক্ষা করিয়া সম্প্রতি পোল্যান্ডের রাজপথে নামিলেন লক্ষাধিক পোলিশ নাগরিক। আদালত গর্ভপাত আইন সংক্রান্ত রায় দিয়াছে, তাহার প্রতিবাদে। ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে পোল্যান্ডে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন পূর্ব হইতেই কঠোর। ধর্ষণের মতো ঘটনার পরে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে, বা গর্ভবতী নারীর জীবনসংশয়ের ঝুঁকি থাকিলে খাতায়-কলমে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ, কিন্তু কার্যকালে অসহযোগিতার অভিযোগ ছিলই। এই বার সাংবিধানিক ট্রাইবুনাল রায় দিল, গর্ভস্থ ভ্রূণের গঠনগত চরম অস্বাভাবিকতা থাকিলেও গর্ভপাত করা যাইবে না। স্বভাবতই জনমানসে বিক্ষোভের ঝড় উঠিয়াছে। ‘আগে মানুষ, পরে ভ্রূণ’ স্লোগান তুলিয়া মানুষ পথে নামিয়াছেন। বলা হইতেছে, আশির দশকে তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরে এত বড় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেশে এই বারই দেখা গেল।

Advertisement

এই প্রতিবাদ স্বাভাবিক। কিন্তু পোল্যান্ডের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থাকিলে বুঝা যাইবে, এই জনবিক্ষোভ এক বৃহত্তর গণআন্দোলনের অংশ। মৌলিক মানবাধিকারকে সুনিশ্চিত করিবার লড়াই। ১৯৮৯ সালে পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট সরকারের পতন হয়। আন্দোলন ও ত্যাগের মূল্যে পোল্যান্ডবাসী মানবাধিকার নিশ্চিত করিয়াছিলেন, নূতন সরকার আনিয়াছিলেন। তাহার পর বহু বৎসর অতিক্রান্ত, ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসিয়াছে বর্তমান শাসক দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’। দক্ষিণপন্থী মতাদর্শের এই দলের শাসনকালে পোল্যান্ডে জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া লাগিয়াছে, রক্ষণশীলতারও রমরমা। পোলিশ প্রতিবাদীরা বলিতেছেন, ত্রিশ বৎসর পূর্বের আন্দোলনে ছিনাইয়া আনা অধিকার আজিকার পোল্যান্ডে পুনরায় অপহৃত হইতেছে। তাঁহারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাইতেছিলেন, পুলিশ উপস্থিত থাকিলেও বাধা দেয় নাই, কিন্তু দক্ষিণপন্থী সমর্থকরা মারমুখী হইয়া উঠিয়াছেন। এক দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা হুমকি দিয়াছেন, এই সমর্থকরা রীতিমতো ‘যুদ্ধকৌশলপটু’। পোল্যান্ডের চার্চ সরকারের নূতন গর্ভপাত আইনকে সমর্থন করিয়াছে, প্রতিবাদ উঠিয়াছে ধর্মের এই অমানবিকতার বিরুদ্ধেও। ধর্ম দেশে দেশে দক্ষিণপন্থার হাতিয়ার, পোল্যান্ডও ব্যতিক্রম নহে। পোল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম খবর করিয়াছে, স্বঘোষিত ‘জাতিরক্ষক’-রা মস্তক মুণ্ডন করিয়া, কালো পোশাক পরিয়া, হাতে লঙ্কাগুঁড়ার স্প্রে লইয়া চার্চ ও ক্যাথিড্রাল পাহারা দিতেছে, পাছে আন্দোলনে সেগুলির ভিত নড়িয়া যায়।

বিভাজনের রাজনীতি, ধর্মকে কুক্ষিগত করিয়া নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে লাগাইবার কৌশল বিলক্ষণ জানেন ভারতীয় নাগরিক। সাংবিধানিক ট্রাইবুনাল শাসক দলের লোক দিয়া ভরাইয়া রাখা, নূতন আইনকে চ্যালেঞ্জ করিতে না পারার রক্ষাকবচ, এই অভিযোগগুলিও একা পোল্যান্ডের নহে। আশার কথা, পোলিশ প্রতিবাদীদের অধিকাংশই নারী, অনেক পুরুষ, প্রায় সর্বাংশ যুব সম্প্রদায়। তাঁহাদের সম্মিলিত স্বরে কাজ হইয়াছে। প্রতিবাদী ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের কথা প্রধানমন্ত্রী শুনিয়াছেন, প্রেসিডেন্টও এক বিকল্প প্রস্তাব করিয়াছেন। নিতান্ত কম প্রাপ্তি নহে। কাজ বিস্তর বাকি। তবু সূচনা তো বটেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement