India-China Relation

নেপথ্য হিসাব

এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটির অর্থনীতি সম্প্রতি যে ভাবে বিবিধ সমস্যার সম্মুখীন, তাতে দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক সুবিধাজনক হতে পারে বেজিং-এর পক্ষে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:৩৯
Share:

ভারত-চিন সীমান্তে আপাতত শান্তির আবহ। তার ইতিবাচক প্রভাব এ বার পরিলক্ষিত হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও। সম্প্রতি লাওস-এ আসিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনের মাঝে দ্বিপাক্ষিক আস্থা বৃদ্ধির উপরে সম্মিলিত ভাবে জোর দিল দুই দেশ। নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর কাজ কত দূর এগিয়েছে, সে বিষয়েও ইতিপূর্বে ব্রাজ়িলে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে আলোচনায় বসেন দুই বিদেশমন্ত্রী। লক্ষণীয়, সীমান্ত বিবাদকে বেজিং এত কাল গুরুত্ব দিতে না চাইলেও, ভারত তার অবস্থানে অনড় থেকেছে— এই সমস্যার সমাধান ছাড়া বাকি ক্ষেত্রে সম্পর্ক সাবলীল হওয়ায় সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় লাদাখের ডেমচক এবং ডেপসাং উপত্যকার বিতর্কিত অঞ্চলে দুই তরফেই সেনা পিছোনোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া এবং পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর পুনরায় টহলদারি চালু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিসাধনে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ বটে। পাশাপাশি মানস সরোবর তীর্থযাত্রা চালু, আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির তথ্য আদানপ্রদান, এমনকি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের মতো বিষয়গুলিও পুনরায় গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হচ্ছে।

Advertisement

তবে, বেজিং-এর প্রতি সতর্কতার দৃষ্টিভঙ্গিও বজায় রাখছে দিল্লি। তার কারণও আছে। সাম্প্রতিক চুক্তির জেরে ডেপসাং এবং ডেমচক-এ টহলদারি শুরু হলেও বাদ থেকে গিয়েছে গলওয়ান উপত্যকা (পিপি ১৪), প্যাংগং সো-এর উত্তর ও দক্ষিণ তীর, গোগরা (পিপি ১৭এ) এবং হটস্প্রিং এরিয়া (পিপি ১৫)-র মতো স্পর্শকাতর অঞ্চল। এগুলি এখনও ‘বাফার জ়োন’-এর অন্তর্গত থাকায় সেখানে ২০২০-পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া, নিজ স্বার্থে ৩৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের কোথাও বেজিং পুনরায় যে বিবাদ উস্কে দেবে না, এমন আশঙ্কাও থাকছে। সমস্যা অন্যত্রও। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের বিস্তার, ভারত মহাসাগর-সহ মলদ্বীপ, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তানের মতো ভারতের পড়শি রাষ্ট্রে বেজিং-এর আধিপত্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা উদ্বেগে রেখেছে দিল্লিকে। অন্য দিকে, তাইওয়ান প্রণালী, পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং-এর প্রসার রোধে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির পাশাপাশি আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতে জোটবদ্ধতা এ-যাবৎ ভাল চোখে দেখেনি বেজিং-ও।

তবে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটির অর্থনীতি সম্প্রতি যে ভাবে বিবিধ সমস্যার সম্মুখীন, তাতে দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক সুবিধাজনক হতে পারে বেজিং-এর পক্ষে। ভারতের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বিনিয়োগ ও রফতানির সুবিধা দেশীয় অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে কাজে আসতে পারে তার। শুধু তা-ই নয়, ইতিমধ্যেই চিনের পণ্যের উপরে চড়া আমদানি শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত-চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পোক্ত করার যা অন্যতম কারণ হতে পারে। অন্য দিকে, কূটনৈতিক স্তরে দিল্লির সঙ্গে নৈকট্য বৃদ্ধির মাধ্যমে কোয়াডের মতো গোষ্ঠী থেকে তাকে জোট-নিরপেক্ষতার পথে ঠেলে দিয়ে নিজের বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের বাধা হ্রাস করতে চাইবে বেজিং। হিসাবের অঙ্কে চিনা মাথার জুড়ি মেলা ভার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement