India

যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ

বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি প্রয়োজনে নিজেদের রাজ্যের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতামতকেই শিরোধার্য করেছে পরিষদে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪৬
Share:

অমৃত মহোৎসব সমাসন্ন, এমন সময় নীতি আয়োগের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে রাজ্যগুলির প্রতি কিছু দাবিদাওয়া পেশ করলেন। প্রশ্ন উঠবে, যুক্তরাষ্ট্রীয়তার মাহাত্ম্য তিনি আদৌ অনুভব করেন কি? জিএসটি নামক ব্যবস্থাটি তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত নয় বটে, কিন্তু পাঁচ বছর আগে তিনিই সেই ব্যবস্থাটি প্রচলন করেন। সেই ব্যবস্থাটি চরিত্রগত ভাবেই যুক্তরাষ্ট্রীয়তার পরিপন্থী— রাজ্যগুলির হাতে নিজস্ব করনীতি স্থির করার যে অধিকার ছিল, ‘এক দেশ, এক করব্যবস্থা’ নামক একেশ্বরবাদী ধারণার যূপকাষ্ঠে তাকে বলি দিয়েই জিএসটির গোড়াপত্তন। রাজ্যগুলির এই অধিকারহানি পুষিয়ে দেওয়ার দায়, দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রের— জিএসটি পরিষদকে প্রকৃতার্থে যুক্তরাষ্ট্রীয়, গণতান্ত্রিক করে তুলে, বিশেষত বিরোধী দল-শাসিত রাজ্যগুলির মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে। কিন্তু জিএসটি পরিষদ মূলত রাজনীতির আখড়াই থেকে গিয়েছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি প্রয়োজনে নিজেদের রাজ্যের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতামতকেই শিরোধার্য করেছে পরিষদে।

Advertisement

তবুও প্রধানমন্ত্রীর মুখে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রশংসা শুনলে আশাবাদী হওয়াই বিধেয়। আশা করা চলে যে, গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে বারংবার সংবিধানের যৌথ তালিকায় থাকা বিষয়গুলি থেকে রাজ্য সরকারকে ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করেছে, এই বার তা বন্ধ হবে। তিনটি উদাহরণের কথা বিশেষ ভাবে আলোচ্য— শিক্ষা, শ্রম ও কৃষি। এই তিনটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকার অতি তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার সাধন করেছে, অথবা সেই চেষ্টা করেছে— এবং, ব্যতিক্রমহীন ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্যগুলি অন্ধকারে থেকে গিয়েছে। যে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছে, তাতে রাজ্যগুলির মতামতের পরিসর ছিল অতি সীমিত, অথবা তার কার্যত কোনও অস্তিত্বই ছিল না। সেই শিক্ষানীতি ভারতের বহুত্ব ও যৌগিক চরিত্রকে বহুলাংশে অস্বীকার করেছে। শ্রম আইনের সংস্কার করে যে শ্রমবিধি রচিত হয়েছে, তাতেও রাজ্যগুলির মতামত গুরুত্ব পায়নি। কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে বছরব্যাপী বিক্ষোভের পর কেন্দ্রীয় সরকার পিছু হটেছে বটে, কিন্তু সেই আইন প্রণয়ন, বা তার থেকে সরে আসা, কোনও ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ধর্মকে সম্মান করা হয়েছে, এমন দাবি করার উপায় নেই। সম্প্রতি অরণ্যের অধিকার আইনে যে পরিবর্তন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, তাতেও রাজ্যের অধিকার খর্ব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার জয়গানের পর আশা করা চলে কি যে, ক্ষমতার এই কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা কমবে?

এই প্রসঙ্গে একটি বিশেষ উদ্বেগের কথা উল্লেখ্য। বিভিন্ন রাজ্য সরকার তার নাগরিকদের যে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে থাকে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তির্যক মন্তব্য করেছিলেন; সুপ্রিম কোর্টও সমগোত্রীয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আদালত জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র রাজনীতিকদের হাতে ছাড়লে এই সমস্যার সমাধান কখনও সম্ভব নয়— তার জন্য রাজনীতিকদের পাশাপাশি নীতি আয়োগ, অর্থ কমিশন, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদিকে নিয়েকমিটি গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে আদালত। বহু রাজ্যেই খয়রাতির পরিমাণ উদ্বেগজনক রকম বেশি, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা উন্নয়নের বদলে রাজনৈতিক ক্লায়েন্টেলিজ়মের যুক্তি দ্বারা চালিত। কিন্তু, তার পরও, উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের এক্তিয়ারবহির্ভূত কাজ করতে বলে রাজ্যের অধিকারের সীমায় হস্তক্ষেপ করা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী নয়? আদালতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও প্রশ্ন করা প্রয়োজন, কোন রাজ্য কোন নীতি দ্বারা চালিত হবে, এই সিদ্ধান্তটি সেই রাজ্যের জনপ্রতিনিধিদের উপর ছেড়ে দিলেই সংবিধানের আদর্শের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হত না কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement