Supreme Court of India

সাম্যের সম্মান

দীর্ঘ দিন ধরেই মুসলিম মেয়েদের খোরপোশের বিষয়টি বিতর্কের কেন্দ্রে। তবে সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন সময়ে বিবাহবিচ্ছিন্না মেয়েদের জীবননির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশ হিসাবে পাওয়ার অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫১
Share:

বিবাহ-বিচ্ছেদের পর স্বামীর থেকে খোরপোশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে ভারতের সব মহিলার। পারিবারিক আইনের বিশিষ্টতা দর্শিয়ে সেই অধিকারকে লঙ্ঘন করতে পারবেন না মুসলিম পুরুষরা। সম্প্রতি একটি রায়ে এ কথা বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করাল, আইনের বিভিন্নতা সত্ত্বেও সংবিধান-প্রদত্ত সাম্যই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ দিন ধরেই মুসলিম মেয়েদের খোরপোশের বিষয়টি বিতর্কের কেন্দ্রে। তবে সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন সময়ে বিবাহবিচ্ছিন্না মেয়েদের জীবননির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশ হিসাবে পাওয়ার অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছে। আশির দশকে শাহ বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রায় দেয় যে, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে খোরপোশ দেওয়ার বিষয়ে ভারতের ফৌজদারি আইন এবং মুসলিম পারিবারিক আইনের কোনও বিরোধ নেই। তালাকপ্রাপ্ত শাহ বানোকে ফৌজদারি আইনের অধীনে খোরপোশ দেওয়ার আদেশ দিলে (১৯৮৫) শোরগোল পড়ে যায়। মুসলিম সমাজের একাংশের ক্ষোভ রুখতে ১৯৮৬ সালে বিবাহবিচ্ছিন্ন মুসলিম মহিলাদের অধিকারের সুরক্ষার জন্য তৎকালীন কংগ্রেস সরকার আইন প্রণয়ন করে, যাতে মুসলিম মহিলারা বিবাহ-বিচ্ছেদের পর কেবল তিন মাস অবধি স্বামীর কাছে খোরপোশ দাবি করতে পারেন। তার পর তাঁর দায়িত্ব নিতে হবে তাঁর পরিবারকে, কিংবা ওয়াকফ বোর্ডকে।

Advertisement

এই আইন তখন সমালোচিত হয়েছিল, যে-হেতু তা ছিল ভারতের মেয়েদের সমানাধিকার-বিরোধী। মুসলিম মহিলাদের বেশ কিছু সংগঠন এ বিষয়ে প্রশ্নও তোলে— অন্যান্য ধর্মের মহিলারা যে আর্থিক নিরাপত্তা পান, কেবল মুসলিম হওয়ায় তা থেকে তাঁরা বঞ্চিত কেন? ১৯৮৬ সালের আইনটির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেনি। তবে স্পষ্ট করে দেয় যে, বিবাহবিচ্ছিন্ন স্ত্রীর সব রকম প্রয়োজন মেটানোর দায় স্বামীরই, এবং ইদ্দত সময়কালের মধ্যেই তা মেটাতে হবে (দানিয়েল লতিফি বনাম ভারত সরকার, ২০০১)। এ ভাবে এক দিকে সাম্যের অধিকার, আর অপর দিকে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের স্বাধীনতা, দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য এনেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এর প্রায় তেইশ বছর পরে মহম্মদ আবদুল সামসাদ নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ফের ফৌজদারি আইনের খোরপোশের ধারাকে অধিক গুরুত্ব দিল।

বিচারপতি বি ভি নাগরত্না এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসির বেঞ্চ এই রায় শুনিয়েছে, যে আইন সর্বজনীন, ধর্মীয় বিধি-আচরণ তাকে বাধাদান করতে পারে না। এমনকি তা আইন হিসেবে বিধিবদ্ধ হলেও, সমস্ত বিবাহিত মহিলার অধিকারকে খর্ব করতে পারে না। ভারতের আইন তার সব নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য, পূর্বের রায়গুলির এই বক্তব্যকে ফের প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি এই রায়টি মনে করাল, নারী অধিকার মৌলিক এবং অলঙ্ঘনীয়। ধর্ম, সম্প্রদায় বা আর কোনও পরিচিতি নারীর অধিকারের সামনে শর্ত তৈরি করতে পারে না। বিবাহে নারী-পুরুষের সমান অধিকার, বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে নিজের জীবনধারণের জন্য তাঁকে কেন পরমুখাপেক্ষী হতে হবে? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা অবশ্যই সুরক্ষার দাবি রাখে। কিন্তু ধর্মীয় বিধি দর্শিয়ে ন্যায় ও কল্যাণের পরিপন্থী কোনও কাজকে সমর্থন করা চলে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement