—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত গত সপ্তাহে একটি গুরুতর পর্যবেক্ষণ করেছে, আত্মহত্যা নিয়ে। পর্যবেক্ষণটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও ধূসর বিষয় সম্পর্কিত— কর্মক্ষেত্রের চাপ এবং আত্মঘাত। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক তর্কবিতর্ক শোনা গিয়েছে, এবং ঘটনাবিশেষে কর্মক্ষেত্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগও আনা হয়েছে। কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশে এক ৬০ বছর বয়সি ব্যক্তির চাকরিস্থল থেকে তাঁকে স্বেচ্ছা-অবসর নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল, এবং তার পর তিনি আত্মঘাতী হন: পর পর এই ঘটনা ঘটে গেলে তা নিয়ে মামলা দায়ের হয়, যা ইলাহাবাদ হাই কোর্ট অবধি যায়। মৃত ব্যক্তির পরিবার ও সহকর্মীরা দাবি করেন, কর্মক্ষেত্রকেই এই আত্মঘাতের দায় নিতে হবে। শেষ অবধি মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সেখানে হাই কোর্টের রায়টিকে উল্টে দেয় সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। এই প্রসঙ্গে যে কথাটির উপর বিচারপতিরা জোর দেন, তা হল— কর্মক্ষেত্রের চাপের ‘পরিবেশ’, এবং কোনও ব্যক্তিকে আত্মঘাতের দিকে সচেতন ভাবে ঠেলে দেওয়ার ‘ইচ্ছা’র মধ্যে একটি জরুরি পার্থক্য রচনা করা বিচারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত আবশ্যিক। আরও একটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ব্যক্তিগত পরিসর ও কর্মপরিসরের মধ্যে একটি ব্যবধান আছে, এবং সম্পর্কজনিত চাপ ও সচেতন প্রাণঘাত উস্কানির মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। দুই ক্ষেত্রেই ব্যবধানরেখাটি ধূসর হতে পারে, আবছা হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই রেখা রক্ষা করা অতীব জরুরি— ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার খাতিরে। বিচারপতিরা বুঝিয়ে বলেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই এমন হতে পারে, আবেগগত ভাবে কোনও সম্পর্ক বা কোনও পরিসর ব্যক্তির পক্ষে কঠিন ও জটিল হয়ে উঠছে— সাধারণ বোধ থেকেই বোঝা যায়, কেবল কর্মক্ষেত্র কেন, যে কোনও সম্পর্ক, এমনকি পরিবার-সম্পর্কের মধ্যেও তা ঘটা সম্ভব। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আত্মঘাতের ইন্ধন জোগানো হয়ে আসছে। প্রসঙ্গত, নতুন ভারতীয় ন্যায়সংহিতা অনুযায়ী, আত্মঘাতে প্রমাণিত উস্কানি একটি গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ফলে সেই আইনে অপরাধ সাক্ষ্যসাপেক্ষে প্রমাণ করা খুবই জরুরি।
অভিযোগ ও প্রমাণের দ্বন্দ্বসম্পর্ক মেটানোর বিষয়টি শুনতে সহজ, কিন্তু আসলে জটিল ও গভীর। অন্য একটি ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনাবলি থেকে এই জটিলতার একটা আন্দাজ পাওয়া সম্ভব— তা হল, পণপ্রথাসম্পর্কিত বৈবাহিক জটিলতা এবং আত্মহত্যা। কত বেশি সংখ্যায় এ দেশের কোণে কোণে এই ঘটনা ঘটে থাকে, সকলেই জানেন। আদালতের বক্তব্য, পুলিশে ডায়েরি বা সুইসাইড নোট থাকলেও তাকে আপাতমূল্যে বিচার করা যাবে না, অভিযুক্ত পক্ষ সত্যই কতখানি জড়িত ও সচেতন উস্কানিদাতা তা প্রমাণ করতে হবে। সমস্যা এখানেই। অনাবশ্যক প্রমাণের জটিলতায় যেন প্রকৃত অপরাধীরা ছাড়া না পেয়ে যান, এটাই বিচারবিভাগের কাম্য, এবং গণতান্ত্রিক সমাজের বাঞ্ছিত। আবার আবেগ-আতিশয্যে অন্যায় ভাবে কারও উপর দায় চাপালে অভিযুক্ত যেন অন্যায় ভাবে শাস্তি না পান, সেটাও একই রকম গুরুত্বসহকারে বিচার্য। ফলে শেষ পর্যন্ত আদালতের সংবেদনশীল বিবেচনার উপরই পুরো সিদ্ধান্তটি নির্ভরশীল। সুপ্রিম কোর্ট সে বিষয়ে আলোকপাত করায় একটি জরুরি কাজ হল।