R G Kar Hospital Incident

বিচারের বাণী

এই সংশয় বা অনাস্থার সুস্পষ্ট পরিচয় বহন করছে আর জি কর হাসপাতাল ও তার চিকিৎসকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে আধাসেনা বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ, যে নির্দেশকে বিরলের মধ্যেও বিরলতম বললে খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজ্য প্রশাসনের একের পর এক উৎকট কীর্তিকলাপ দেখতে দেখতে যে প্রশ্নগুলি সমাজের বিভিন্ন বর্গ থেকে ক্রমাগত উঠে এসেছিল, মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বক্তব্যে তার অনেকগুলিই প্রবল ভাবে স্বীকৃত হয়েছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৯ অগস্টের ভয়াবহ ঘটনার অব্যবহিত পরে পুলিশ ও প্রশাসনের আচরণ, ওই প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন অধ্যক্ষকে নিয়ে রাজ্য সরকারের আচরণ এবং ১৪ অগস্ট রাতে সেখানে ভাঙচুরের সময় পুলিশের আচরণ— তিনটির জন্যই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ তিন বিচারকের বেঞ্চ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে যে ভাবে সুতীব্র প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল, তা কেবল কঠোর তিরস্কারের শামিল নয়, মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, আদালতের কথায় ও সুরে নিহিত ছিল রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও সামর্থ্য সম্পর্কে এক গভীর সংশয়। বস্তুত, এই সংশয় বা অনাস্থার সুস্পষ্ট পরিচয় বহন করছে আর জি কর হাসপাতাল ও তার চিকিৎসকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে আধাসেনা বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ, যে নির্দেশকে বিরলের মধ্যেও বিরলতম বললে খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসককুলের নৈতিকতা, লজ্জা বা আত্মমর্যাদা বোধের ছিটেফোঁটাও যদি অবশিষ্ট থাকে, তবে বিচারব্যবস্থার শিখর থেকে এই প্রবল ও দ্ব্যর্থহীন ভর্ৎসনার পরে তাঁরা কৃতকর্মের জন্য নতজানু হয়ে মার্জনাভিক্ষা করবেন এবং কালক্ষেপ না করে আত্মসংশোধনে ব্রতী হবেন। কিন্তু তাঁদের কাছে সেই আচরণের কিছুমাত্র ভরসা বোধ করি এই রাজ্যের নাগরিকরা করেন না, এই বেপরোয়া দুঃশাসনের নায়কনায়িকারা তেমন ভরসা করার কোনও অবকাশ রাখেননি। কথায় কথায় রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগে যাঁরা পাড়া মাথায় করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মনে মনে বিলক্ষণ জানেন যে, আর জি কর কাণ্ডে প্রথমে হাই কোর্টের নির্দেশে অবিলম্বে সিবিআইয়ের প্রবেশ এবং এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশ, দু’টির জন্যই দায়ী তাঁদের চরম অপদার্থতা, যে অপদার্থতার পিছনে গূঢ়তর অভিসন্ধি এবং প্রগাঢ়তর দুরাচারের বড় ভূমিকা থাকা একেবারেই অসম্ভব নয়।

অতঃপর প্রশ্ন: সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরে কি তদন্ত প্রক্রিয়া ঠিক ভাবে অগ্রসর হবে? রাজ্য প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে মূল্যবান বলেই এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বড় রকমের সংশয় আছে। কিন্তু সিবিআই তদন্তের ইতিহাসও সেই সংশয় বাড়িয়ে তোলে। লক্ষণীয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তে গতি সঞ্চারের প্রচেষ্টা আছে। আশা করা যায় সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। আশা করা যায়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও রাজ্য প্রশাসনের টানাপড়েনে সত্যানুসন্ধানের কাজে বাধা পড়লে বিচারবিভাগ সেই বাধা অপসারণে তৎপর হবে। তৎপরতা কেবল এই একটি অপরাধের সুবিচারের জন্যই জরুরি নয়, সামগ্রিক ভাবে কর্মস্থলে ও জনপরিসরে মেয়েদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা এবং সসম্মান সমানাধিকার নিশ্চিত করার জন্যও অত্যাবশ্যক। এই সামগ্রিক সংশোধনের লক্ষ্যেই দেশের সর্বত্র হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধানের আয়োজনকে দৃঢ়তর করতে একটি সুরক্ষা বিধি প্রণয়নের কাজে উদ্যোগী হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং তার জন্য জাতীয় টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে। জরুরি উদ্যোগ, সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এই গোড়ার কথাটিও মনে রাখা দরকার যে, প্রশাসনের কর্তা ও কর্ত্রীরা যদি সৎ ভাবে অপরাধ দমন করতে না চান, তা হলে কোনও সুরক্ষা বিধি দিয়েই প্রকৃত নিরাপত্তা সরবরাহ করা দুঃসাধ্য। দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই নানা ভয়াবহ ঘটনায় বারংবার এই সত্যের প্রমাণ মিলেছে। আর জি কর কাহিনি সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের গভীর উদ্বেগ এবং তৎপর হস্তক্ষেপও শেষ অবধি প্রশাসনের দায়িত্বকেই চিহ্নিত করে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement