Summer Vacation

ছুটি ঝঞ্ঝাট

ছুটি প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নও উঠে এসেছে। সম্প্রতি দেখা গেল, দক্ষিণবঙ্গ যখন পুড়ছে, উত্তরবঙ্গে পড়ুয়াদের শীতবস্ত্র পরে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২২ ০৫:৫৪
Share:

দিনকয়েকের দহনজ্বালা পেরিয়ে অবশেষে খানিক স্বস্তি। ঝড়বৃষ্টির কারণে আবহাওয়াও কিছু মনোরম। সুতরাং গরমের ছুটি এগিয়ে আনার সরকারি সিদ্ধান্ত ঘিরে ঘোর বিতর্ক দানা বেঁধেছে। জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। প্রসঙ্গত, প্রবল তাপের কারণে স্কুল-কলেজে গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনা নতুন ঘটনা নয়। অতীতেও এ-হেন সরকারি সিদ্ধান্তের সাক্ষী হয়েছে রাজ্য। এমনও হয়েছে, গ্রীষ্মাবকাশ পেরিয়ে সবেমাত্র স্কুল খোলার অব্যবহিত পরেই ফের তা কিছু দিনের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছে অত্যধিক গরমের কারণে। তা ছাড়া অনেক জায়গাতেই সরকারি স্কুলের পরিকাঠামোয় লক্ষণীয় খামতি আছে। অনেক স্কুলে পাখা নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জলেরও অভাব রয়েছে। এই সমস্ত দিক বিবেচনা করে এ বারও স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত।

Advertisement

তবু এই বছরটি আলাদা। শিক্ষক-অভিভাবকদের একাংশের মধ্যে যে স্কুল বন্ধের ঘোষণাকে ঘিরে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, এবং এক বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষক-অভিভাবক যে চাইছেন সিদ্ধান্তটির পুনর্বিবেচনা করা হোক, তার মূল কারণ অতিমারি পরিস্থিতি। প্রায় দু’বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকার পর অবশেষে তাতে নিয়মিত পঠনপাঠন শুরু করা সম্ভব হয়েছে। ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শিক্ষক-পড়ুয়ার সম্পর্ক, পরীক্ষার সময়সূচি। এমতাবস্থায় যে কোনও ছন্দপতন এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে স্তব্ধ করে পুনরায় এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই মাঝপথে পড়া ছেড়ে পরিবারের অন্ন সংস্থানে মন দিয়েছে, এমন পড়ুয়ার সংখ্যাটি অবহেলা করার মতো নয়। অন্যদের ক্ষেত্রেও এই দু’বছরের ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তদুপরি ফের দীর্ঘ অবকাশে ক্ষতির সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন সকলেই। কেন গরম বাড়লেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে এবং প্রায় দেড় মাস ধরে গ্রীষ্মাবকাশ চলবে— সেই প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছুটির ঘোষণা সত্ত্বেও পুরনো সূচি মেনেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, ক্লাস চলেছে। বেসরকারি অনেক স্কুলেও নিয়মিত পঠনপাঠন হয়েছে।

ছুটি প্রসঙ্গে একটি সঙ্গত প্রশ্নও উঠে এসেছে। সম্প্রতি দেখা গেল, দক্ষিণবঙ্গ যখন পুড়ছে, উত্তরবঙ্গে পড়ুয়াদের শীতবস্ত্র পরে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। সুতরাং প্রশ্ন উঠেছে, গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি উত্তরবঙ্গের স্কুলগুলির ক্ষেত্রেও বলবৎ হবে কেন? বাস্তবিকই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু বৈচিত্রপূর্ণ। গরমের ছুটির দিন-ক্ষণ ঘোষণার পূর্বে এই বৈচিত্রের কথাটি মাথায় রাখা দরকার। উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় হয়তো অত্যধিক বৃষ্টির সময়ে কিছু দিন স্কুল বন্ধ রাখা অধিক জরুরি হয়ে পড়বে। সুতরাং, ছুটির হিসাবের ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে সমগ্র রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়ের উপর একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত। ছুটি হোক প্রয়োজনভিত্তিক। এই ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিবেশ, পরিবর্তিত আবহাওয়ার নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এবং অবশ্যই জেলাগুলির প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া যুক্তিযুক্ত। ছুটি বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্তের দায়িত্ব জেলার প্রশাসকমণ্ডলীর উপরেই ন্যস্ত হোক। তাঁরাই স্থানীয় আবহাওয়া এবং পরিস্থিতি বিচার করে ছুটির দিন এবং দৈর্ঘ্য নির্ণয় করবেন। এই ব্যবস্থায় রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শিক্ষা— উভয়ই রক্ষা পাবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement