Chandrayan 3 Moon Landing

পূর্ণ চন্দ্র অভিযান

একই কথা আজ খাটে চন্দ্রযান-৩’এর ক্ষেত্রেও। চন্দ্রযান-৩’এর ক্ষেত্রে কোনও মানবারোহী ছিল না বটে, তবে এই সাফল্যের তাৎপর্য বিশাল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৩৯
Share:

চন্দ্রযান-৩। —ফাইল চিত্র।

শক অব দ্য সেঞ্চুরি: শতাব্দীর আঘাত। ১৯৫৭ সালে পূর্বতন সোভিয়েট ইউনিয়নের মহাকাশে কৃত্রিম উৎক্ষেপণকে ওই অভিধা দিয়েছিল আমেরিকা। স্পুটনিক-১’এর মহাকাশযাত্রা সত্যিই আমেরিকার ত্রাসের কারণ ছিল। তখন ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ, রুশ-আমেরিকা প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। ধনতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র, কোনটা শ্রেয় এই তর্ক লেগেই ছিল। আমেরিকা জুড়ে ছিল রুশ জুজুর ভয়— সোভিয়েট ইউনিয়ন না আবার আমেরিকাকে আক্রমণ করে বসে! আমেরিকার কোন কোন শহর স্পুটনিক-১’এর কক্ষপথে পড়ে, কোন কোন শহর নজরদারিতে থাকবে, সে নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় আমেরিকার মানুষ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ১৯৬১ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের পরাজয় হয়। সে দলের বদলে ক্ষমতায় আসে ডেমোক্র্যাট দল। সে দলের জন ফিটজ়েরাল্ড কেনেডি আমেরিকায় শাসনভার গ্রহণ করেন। রাশিয়া জুজুর প্রভাবেই হয়তো, কেনেডি ১৯৬২ সালেই ঘোষণা করেন, ১৯৬০-এর দশক শেষ হওয়ার আগেই আমেরিকা চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে আবার তাকে সশরীরে ফিরিয়ে আনবে। সেই স্বপ্ন সার্থক হয় ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। আমেরিকা নিল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিনকে চাঁদে পাঠিয়ে আবার ফেরত নিয়ে আসে। আর্মস্ট্রং প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী মহাকাশচারী হিসাবে পরিগণিত হন। চাঁদে নেমে যে প্রথম বাক্যটি বলেন আর্মস্ট্রং (অবশ্যই যা অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করেছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা), তা স্বর্ণাক্ষরে খচিত হওয়ার যোগ্য। চাঁদে প্রথম পদক্ষেপ করে আর্মস্ট্রং বলেন, “আ স্মল স্টেপ ফর আ ম্যান, আ জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড।”

Advertisement

একই কথা আজ খাটে চন্দ্রযান-৩’এর ক্ষেত্রেও। চন্দ্রযান-৩’এর ক্ষেত্রে কোনও মানবারোহী ছিল না বটে, তবে এই সাফল্যের তাৎপর্য বিশাল। যে ভাবে ঘড়ি ধরে গত বুধবার সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার চাঁদের মাটিতে নেমেছে, তাতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র মহাকাশবিজয় ঘোষিত হয়েছে। সূর্য, মঙ্গলগ্রহ এবং শুক্রগ্রহ অভিযানে কাজে লাগবে চন্দ্রযান-৩’এর সফল অবতরণ। নাসা-র প্রধান উইলিয়াম নেলসন ইসরো-র প্রধান শ্রীধর পানিকার সোমনাথকে অভিনন্দন জানিয়ে টেলিগ্রাম করেছেন। অভিনন্দন এসেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)-র প্রধান জোসেফ আসবাখার-এর কাছ থেকেও। মানে, ভারত এই মুহূর্তে উপেক্ষার দেশ নয়। বাস্তবিক, ভারত চতুর্থ দেশ, যা চাঁদের বুকে যান নামিয়েছে। এই কৃতিত্ব এখনও পর্যন্ত তিনটি দেশ (আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন)-এর ছিল। তার সঙ্গে এখন জুড়ল ভারত। আর, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ? সে সাফল্য ভারতের একার। আর কোনও দেশ এখনও ওই দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি।

বিজ্ঞান গবেষণা আসলে এক প্রতিযোগিতা— দেশে-দেশে, ল্যাবরেটরিতে-ল্যাবরেটরিতে কিংবা বিজ্ঞানীতে-বিজ্ঞানীতে। এ প্রসঙ্গে আসে রাশিয়ার পাঠানো লুনা-২৫ মহাকাশযানের নাম। চন্দ্রযান-৩’এর পাশাপাশি ওই মহাকাশযানও ছিল প্রতিযোগিতায়। চন্দ্রযান-৩ যেখানে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল ১৪ জুলাই, সেখানে লুনা-২৫ পাঠানো হয়েছিল ১০ অগস্ট। দশ দিনের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা ছিল লুনা-২৫’এর। কিন্তু সে মহাকাশযান অবতরণকালে চাঁদের বুকে মুখ থুবড়ে পড়ে। মহাকাশযাত্রায় ব্যর্থতা কোনও বড় কথা নয়। যে অ্যাপোলো প্রকল্পে একাদশ যান চন্দ্রাবতরণ করে, সেই প্রকল্পে প্রথম যান ১৯৬৭ সালে ব্যর্থ হয়। ওই ব্যর্থ প্রকল্পে তিন জন মহাকাশচারীই মারা যান। ১৯৮৬ সালের চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা তো বিখ্যাত। সে দুর্ঘটনার তদন্তের যে কমিটি গঠিত হয়, তার এক জন সদস্য হন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রিচার্ড ফিলিপ ফাইনম্যান। তিনি যে ত্রুটি খুঁজে পান ওই দুর্ঘটনার মূলে, তা অভিনব। তিনি দেখেন, অত্যধিক ঠান্ডায় একটা যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় ওই দুর্ঘটনা। যন্ত্রাংশটি নষ্টের সম্ভাবনা যে আছে, তা ভাবেননি নাসা-র বিজ্ঞানীরা। সুতরাং, নানা কারণে মহাকাশ প্রকল্প ব্যর্থ হতে পারে। চন্দ্রযান-৩’এর চার বছর আগে চন্দ্রযান-২’ও ব্যর্থ হয়েছিল। শ্রীধর পানিকার সোমনাথ বলেছেন, চন্দ্রযান-২ কেন চাঁদের মাটিতে থুবড়ে পড়েছিল, সেটা বুঝতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এক বছর সময় লেগেছিল। বাকি তিন বছর চন্দ্রযান-৩’এর প্রস্তুতি। ভুল করা কথা নয়, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই বড় কথা। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আগের বারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, এবং সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement