প্রতীকী ছবি।
বহু বৎসর বাদে কিছু প্রাণ ফেরত পাইল সার্ক। গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার আটদেশীয় জোট এবং মরিশাস ও সেশেলেস-কে লইয়া কোভিড কর্মশালার আয়োজন করিয়াছিল ভারত। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা হইলে কী রূপে নিকট ও দূর প্রতিবেশীসমূহের সহিত সহযোগিতা করিতে পারে নয়াদিল্লি, তাহার নিমিত্ত পাঁচটি প্রস্তাবের রূপরেখা দিয়াছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ দিন যাবৎ আঞ্চলিক কূটনীতিতে সার্কের কার্যকর ভূমিকা অনুপস্থিত, আঞ্চলিক সঙ্কটে সদস্য দেশগুলিই ইহার উপর নির্ভর করে না, দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সংঘাত-সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করিতেও তাহারা প্রায় ব্যর্থ, তাই ইহার অস্তিত্ব লইয়াই প্রশ্ন উঠিতেছিল। এই বৈঠকে, সামান্য হইলেও তাহার উত্তর মিলিল। সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি চিরদিনই ভরসাজনক, কার্যকর হইলে ভাল, না হইলেও পারস্পরিক বিনিময়ে লাভ বই ক্ষতি নাই। কোভিড-পরিস্থিতি ও তৎপরবর্তী টিকাদানের উদ্যোগই ইহার পাথুরে প্রমাণ। তদ্ব্যতীত, অতীত দর্শাইয়া ভবিষ্যৎ নস্যাৎ করিলে নূতনের সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়। এই মুহূর্তে, যখন বিশ্বজনীন প্রতিকূলতা অতিক্রম করিতে বহুপাক্ষিক সহযোগিতাই একমাত্র অবলম্বন হইয়াছে, তখন সহযোগিতার মঞ্চটিও বাতিল করিয়া দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হইত না। আঞ্চলিক সংহতি পোক্ত করে বহুপাক্ষিক সংগঠন। সুতরাং, কর্মশালার উদ্যোগ ও সহযোগিতার এই আহ্বান স্বাগত।
ঘোষণা করিয়াছিলেন, দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীসমূহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না করা অবধি ইসলামাবাদের সহিত কোনও আলোচনা চলিবে নাকর্মশালাটির আর একটি গুরুত্ব পাকিস্তানের উপস্থিতিতে। পাকিস্তানের সহিত জল-অচল সম্পর্ক করিয়াছিলেন ভূতপূর্ব বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। । বিগত ডিসেম্বরেও এক পত্রে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদকেই ভারতের সার্ক বৈঠকে যোগ দিবার পথে প্রধান বাধা বলিয়া ইঙ্গিত করিয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কোভিড-কালেও পাকিস্তান ব্যতীত সকল প্রতিবেশীকে সহায়তা করিয়াছে ভারত। সাম্প্রতিক আয়োজনে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিতে অনুমান করা যায় যে, পূর্বের অবস্থান কিছুটা পাল্টাইতেছে।
যদিও এই পরিবর্তনেও ভারসাম্যের হিসাব স্পষ্ট। আসন্ন ব্রিকস বৈঠকে গত নভেম্বরে প্রকাশিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন লইয়া আলোচনা হইতে চলিয়াছে। বিশেষজ্ঞদের মত, চিন ও পাকিস্তান যত কাছাকাছি আসিতেছে, ততই ভারতের পক্ষে উভয় প্রতিবেশীর সহিত সীমান্ত সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়িতেছে। ব্রিকস-কে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী মঞ্চ করিয়া তুলিতে পারিলে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও দুই দেশের এই অক্ষ লইয়া কাটাছেঁড়া হইতে পারে। অপর পক্ষে, ভারত-চিন সংঘাত প্রশমনের কাজটি করে রাশিয়া। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে চিনের অবস্থান তাহাদের সম্মুখে ঝালাইয়া লওয়াও কৌশলী কূটনৈতিক চাল। বস্তুত, আন্তঃসীমা সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে নয়াদিল্লি নরম হয় নাই, নীতি আরও পরিণত হইয়াছে। এক্ষণে তাই বিদেশনীতিতে এক সঙ্গে দুইটি সদর্থক পদক্ষেপ করিল ভারত। এক পক্ষে সার্কের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা, অপর পক্ষে ব্রিকসে কুশলী পন্থা। ইদানীং আঞ্চলিক পরিসরে ভারতের যে শক্তি ও সমীহ ক্ষয় ঘটিয়াছে, তাহার পুনরুদ্ধার কি হইবে?