Hacking

নিরাপত্তা

তথ্যের নিরাপত্তা বজায় রাখিবার কাজটি কঠিনতর— এখানে শত্রু অচেনা, সীমান্তটিও যথেষ্ট পরিচিত নহে। কিন্তু, পরাস্ত হইলে চলিবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫০
Share:

যেখানে প্রধানমন্ত্রীর টুইটার হ্যান্ডলই একাধিক বার ‘হ্যাক’ হইয়া যায়, তবে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তার কী হইবে? বিরোধী দলগুলির এই প্রশ্নটিকে নিছক রাজনৈতিক বিরোধিতা ভাবিলে মস্ত ভুল হইবে। বিটকয়েনকে ভারতের আইনি মুদ্রা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া সংক্রান্ত ভুয়া টুইটটি কী ভাবে রবিবার রাত্রিতে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্ট হইতে প্রকাশিত হইল, তাহা এখনও বহুলাংশে রহস্যাবৃত। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, ইহা হ্যাকারদের একটি নির্দোষ মজামাত্র— তাহারা খেলার ছলে হ্যাকিং করিতেছে, কোনও অসদুদ্দেশ্য নাই, ইহা জানাইবার সাঙ্কেতিক ভাষাই নাকি ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে সওয়াল করা। ইতিপূর্বেও বহু বার এই ঘটনা ঘটিয়াছে। অনেকে আবার ঘটনাটিকে এত সরল ভাবে দেখিবার পক্ষপাতী নহেন। প্রধানমন্ত্রীর টুইটার অ্যাকাউন্ট দুই বৎসরে দুই বার হ্যাক হইবার পিছনে গূঢ়তর কোনও কারণ আছে কি না, তাঁহারা সেই প্রশ্ন তুলিয়াছেন। গূঢ় অভিসন্ধিই হউক, বা কোনও ষষ্ঠীচরণ নিতান্তই খেলার ছলে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করিয়া থাকুক, মোট কথা হইল, ভারতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটির অ্যাকাউন্টও নিরাপদ নহে।

Advertisement

এইখানেই প্রশ্ন। তথ্যই যে একবিংশ শতকের সোনা অথবা পেট্রোলিয়াম, এত দিনে তাহা সংশয়াতীত রকম প্রতিষ্ঠিত। তথ্যপ্রযুক্তির মহামধ্যাহ্নে প্রতিটি নাগরিকই প্রকৃত প্রস্তাবে বহুবিধ তথ্যের সমাহার। তাঁহার পছন্দ-অপছন্দ, খরিদ্দারির ইতিহাস, রাজনৈতিক মনোভাব ইত্যাদি যেমন বিক্রয়যোগ্য পণ্য, তেমনই তাঁহার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, আধার কার্ড-প্যান কার্ডের তথ্য ইত্যাদিও বহুমূল্য পণ্য। কোনও তথ্যের ব্যবহার হয় সেই ব্যক্তিবিশেষ বা সম্ভাব্য ক্রেতাকে বিশেষ কোনও পণ্য, পরিষেবা বা মতামতের দিকে ঠেলিয়া দিবার কাজে; কোনও তথ্য আবার ব্যবহৃত হয় সেই তথ্যের অধিকারীকে সরাসরি প্রতারণার কাজে। বারে বারেই এই বিপুল তথ্যসমুদ্রের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্ন উঠিয়াছে। গত কয়েক বৎসরে স্পষ্ট হইয়াছে যে, সাধারণ মানুষ নিজেদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে কতখানি ব্যক্তিগত তথ্য সমাজমাধ্যমে হাটখোলা করিয়া রাখিয়াছেন। কিন্তু, সেই স্বেচ্ছা-তথ্যের পাশাপাশি রহিয়াছে বাধ্যতামূলক তথ্যপ্রদান। ভারতে কার্যত সব নাগরিকের বায়োমেট্রিক তথ্য জোগাড় করিয়াছে আধার কার্ড প্রকল্প। সেই তথ্যে সংযুক্ত হইয়াছে নাগরিকের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেল অ্যাড্রেসের ন্যায় পরিচিতি। তাহার সহিত যোগ হইয়াছে প্যান কার্ড— যাহা আবার নাগরিকের প্রতিটি আর্থিক লেনদেনের সহিত যুক্ত। আধার কার্ড সরাসরি যুক্ত হইয়াছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। অর্থাৎ, আধার-বাবদ নাগরিকের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই সরকার আদায় করিয়া ছাড়িয়াছে।

সেই তথ্যভান্ডারের কেমন অপব্যবহার সরকার করিতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিল এবং আছে। কিন্তু, তাহার পাশাপাশি প্রকটতর হইতেছে অন্য আশঙ্কা— এই বিপুল তথ্যভান্ডারের সুরক্ষার দায়িত্ব পালন কি আদৌ এই সরকার, এই প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব? যে প্রশাসন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টকে নিরাপদে রাখিতে পারে না, তাহা একশত চল্লিশ কোটি নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তা বিধান করিবে, এমন কথা বিনা প্রশ্নে মানিয়া লইবার কোনও কারণ আছে কি? নাগরিকের নিকট হইতে যে তথ্য সরকার আদায় করিয়াছে, তাহার গোপনীয়তায় নাগরিকের অধিকার প্রশ্নাতীত। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হইবার পর এক বিরোধী নেতা স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন যে, তথ্যের নিরাপত্তার গুরুত্ব সীমান্তের নিরাপত্তার তুলনায় কম নহে। বস্তুত, তথ্যের নিরাপত্তা বজায় রাখিবার কাজটি কঠিনতর— এখানে শত্রু অচেনা, সীমান্তটিও যথেষ্ট পরিচিত নহে। কিন্তু, পরাস্ত হইলে চলিবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement