Government Schools

দৈন্যদশা

উভয় সরকারকেই মনে রাখতে হবে, শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামো, পুষ্টির মতো বিষয়গুলি রাজনীতির উপাদান নয়। তার সঙ্গে এক শিশুর সর্বাঙ্গীণ উন্নতির প্রশ্নটি জড়িয়ে থাকে। সেখানে যে কোনও প্রকার গাফিলতি অক্ষমণীয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:০৪
Share:

কোনও রাজ্য তার শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি কতখানি যত্নশীল, তা দেখে রাজ্যটির অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সে দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের যে প্রায় কোনও অগ্রগতিই হয়নি, বরং সরকারি শিক্ষার ক্ষেত্রে যে রাজ্যটি পিছনপানে হাঁটা শুরু করেছে, তেমনটা বললে অত্যুক্তি হবে না। এ রাজ্যের সরকার ও সরকারপোষিত বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোগত হতশ্রী দশা জনসমক্ষে জাজ্বল্যমান। সম্প্রতি যেমন জানা গেল, অনেক স্কুল অর্থের অভাবে বিদ্যুৎ-টেলিফোনের বিল দিতে পারছে না। বহু স্কুলে চক-ডাস্টার কেনার খরচও মিলছে না। কারণ, এই সমস্ত দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সম্মিলিত ভাবে যে ‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট’ প্রদান করে, তার অর্থ এখনও হাতে পায়নি প্রায় কোনও প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। ফলত, অনেক বিদ্যালয়কে ঋণ নিয়ে তার দৈনন্দিন খরচ চালাতে হচ্ছে।

Advertisement

এই বিদ্যালয়গুলির উপর অসংখ্য দরিদ্র শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। বেসরকারি বিদ্যালয়ে গিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা তাদের পক্ষে অসম্ভব। অন্য দিকে, এই শিশুরা যাতে পাঠ-বঞ্চিত না হয়, তার জন্য সরকারি এবং সরকারপোষিত বিদ্যালয়গুলিতে পড়ার খরচ যৎসামান্য রাখা হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজ চলে না। সুতরাং, এক দিকে আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষে সমস্ত শিশুকে পড়ার সুযোগ প্রদান, এবং অন্য দিকে বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত পড়াশোনা চালানোর ন্যূনতম পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের। ভারতে শিক্ষা যে-হেতু কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সেই হিসাবে কম্পোজ়িট গ্রান্ট জোগানোর দায়িত্বটিও উভয় সরকারেরই। বাস্তবেও বরাদ্দ টাকার ৪০ শতাংশ প্রদান করে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যকে দিতে হয় ৬০ শতাংশ। অথচ, সেই নির্দিষ্ট টাকা সব সময়ে মেলে না বলে অভিযোগ। এই বছর বিলম্বের কারণ হিসাবে যেমন উঠে এসেছে যে, কেন্দ্র তাদের অংশের টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু তার জন্য রাজ্যের অংশটুকুও কেন মিলবে না, সেই যুক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, বিশেষত যেখানে অন্য অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের টাকা না পাওয়া গেলেও রাজ্যের টাকা আটকে থাকে না। তবে কি বুঝে নিতে হবে, স্কুলপড়ুয়ারা আপাতত ভোটার নয় বলেই তাদের প্রয়োজনগুলি অগ্রাধিকার-তালিকার তলানিতে পড়ে থাকছে?

সর্বোপরি, শুধুমাত্র কম্পোজ়িট গ্রান্ট-এর ক্ষেত্রেই নয়, মিড-ডে মিলের মতো বিষয়েও কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর অব্যাহত থাকে। উভয় সরকারকেই মনে রাখতে হবে, শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামো, পুষ্টির মতো বিষয়গুলি রাজনীতির উপাদান নয়। তার সঙ্গে এক শিশুর সর্বাঙ্গীণ উন্নতির প্রশ্নটি জড়িয়ে থাকে। সেখানে যে কোনও প্রকার গাফিলতি অক্ষমণীয়। কম্পোজ়িট গ্রান্ট-এর টাকার অঙ্কটি বিশাল নয়। সব স্কুলে সমান পরিমাণ অর্থও প্রদান করতে হয় না। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা বিচার্য। তা সত্ত্বেও যদি অর্থের অভাবে বিদ্যুতের বিল জমা না পড়ে, ভাঙা চেয়ার-টেবিল সারানো না যায় বা প্রশ্নপত্র ছাপানোয় সমস্যা দেখা যায়, তবে স্কুল খুলে রেখে লাভ কী? এমনিতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অভাবে স্কুলগুলি ধুঁকছে, তদুপরি ন্যূনতম সরঞ্জামের অভাবে দৈনন্দিন পঠনপাঠনও বন্ধ হলে সরকারি শিক্ষায় ধ্বংসের কাজটি সম্পূর্ণ হবে। আশঙ্কা, অতি দ্রুত পশ্চিমবঙ্গ সেই দিকেই ধাবমান।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement