Petrol Diesel Price Hike

নাজেহাল

লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিকে এক ধরনের পরোক্ষ কর হিসাবে বিবেচনা করা যাইতে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

অবশেষে কলিকাতাতেও পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি শত টাকা ছাড়াইল। দেশের অন্য কিছু প্রান্তে দিনকয়েক পূর্বেই ঘটনাটি ঘটিয়াছে। বহু দিন হইল, তেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা তাঁহার অনুগতরা কিছু বলেন না। যখন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন তাঁহারা বিপুল উদ্যমে সেই সরকারকে আক্রমণ করিতেন। ইউপিএ-কে হারাইয়া তাঁহারা ক্ষমতায় আসিবার পরও তেলের দাম বাড়িলে তাঁহারা ইউপিএ-কেই আক্রমণ করিতেন। ইদানীং সেটুকু প্রতিক্রিয়াও তাঁহাদের নাই। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আঁচে দেশ ঝলসাইয়া যাইতেছে, অথচ নেতাদের চর্চিত নীরবতা অটুট। তেলের দাম কেন বাড়ে, তাহার অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া কী, সেই মূল্যবৃদ্ধির পিছনে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব কতখানি, এই সব প্রশ্ন লইয়া বিস্তর আলোচনা হইয়াছে, ভবিষ্যতেও হইবে। আপাতত একটি ভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করা প্রয়োজন— তেলের দাম বাড়িলে সাধারণ মানুষের জীবনে তাহার কী প্রভাব পড়ে, প্রধানমন্ত্রী জানেন তো? এই অতিমারি-লাঞ্ছিত সময়ে সেই বাড়তি যন্ত্রণার দিকে মানুষকে ঠেলিয়া দিবার পরও এই নীরবতা তাহা হইলে কী প্রমাণ করে? ইহাই যে, সাধারণ মানুষের যন্ত্রণায় দেশের সর্বপ্রধান নেতার কিছু ইতরবিশেষ হয় না? ইহাই যে, ইউপিএ আমলে তেলের দাম লইয়া তাঁহারা যে পাড়া মাথায় করিতেন, সেখানে সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা বলা নেহাতই রাজনৈতিক কৌশল ছিল— মানুষের প্রতি দরদের তিলমাত্র তাহাতে ছিল না? ইহাই যে, তাঁহাদের রাজনীতি আছে, জনস্বার্থ নাই?

Advertisement

তেলের দাম বৃদ্ধি কেন সাধারণ মানুষের দুর্দশার কারণ হইয়া দাঁড়ায়? প্রথমত, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে যাতায়াতের খরচের উপরে। কিন্তু, পরোক্ষ প্রভাবের তুলনায় তাহা সামান্যই। মানুষের ব্যবহার্য কার্যত প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে কম-বেশি পরিবহণ প্রয়োজন— কোথাও আন্তঃরাজ্য পরিবহণ, কোথাও বা রাজ্যেরই এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তে, বা শহরের এক এলাকা হইতে অন্য এলাকায়। তেলের দাম বাড়িলে পরিবহণের ব্যয়ও বাড়ে। তাহাতে সরাসরি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। প্রাত্যহিক বাজারের খরচ যে বাড়িয়াই চলিয়াছে, তাহার পিছনে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব প্রচুর। দ্বিতীয় ধাপে, এই প্রাথমিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে অন্যান্য পণ্যেরও মূল্যবৃদ্ধি আরম্ভ হয়, এবং তাহার একটি দুষ্টচক্রের সূচনা হয়। ভারতের বাজারে খুচরা পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহনসীমার ঊর্ধ্বে চলিয়া গিয়াছে। এই অবস্থার পিছনে সর্বাধিক দায় পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির, যাহার কথা স্বীকার করিতেই দেশের কর্তারা নারাজ।

লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিকে এক ধরনের পরোক্ষ কর হিসাবে বিবেচনা করা যাইতে পারে— যে কোনও পরোক্ষ করের ধর্ম মানিয়াই এই করও চরিত্রে ‘রিগ্রেসিভ’, অর্থাৎ যাঁহার আয় যত কম, তাঁহার উপর করের বোঝা তত বেশি। গত মাসে যে পণ্য-বান্ডিলের দাম একশত টাকা ছিল, এই মাসে তাহা একশত পাঁচ টাকা হইলে, যিনিই সেই পণ্যসামগ্রী কিনিবেন, তাঁহার নিকট হইতেই সেই বাড়তি পাঁচ টাকার ‘কর’ আদায় করা হইবে। যাঁহার মাসিক আয় যত কম, এই বাড়তি কর তাঁহার আয়ের শতাংশ হিসাবে তত বেশি। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে যখন দেশে আর্থিক বৈষম্য প্রবল ভাবে ঊর্ধ্বমুখী, যখন আরও বেশি সংখ্যক মানুষ প্রতি মাসে দারিদ্রসীমার নীচে নামিয়া যাইতেছেন, তখন তাঁহাদের উপর এই বাড়তি করের বোঝা চাপানো ভয়ঙ্কর। কেন্দ্রীয় সরকার অবলীলায় সেই কাজটি করিয়া চলিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেট্রোপণ্যের উপর কেন্দ্রীয় শুল্ক কমাইবার কথা বলিয়াছিলেন, সরকার তাহাতেও রাজি নহে। মানুষের দুর্দশা বুঝি তাঁহাদের চোখেই পড়ে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement