Election Commission

পর্যবেক্ষকের ‘কাজ’

রাজ্যে সেই টানাপড়েন নির্বাচনী মরসুমে অবধারিত ঘটনা হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২১ ০৫:১৭
Share:

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু হইবার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা দৈনন্দিন সংবাদের শিরোনামে উঠিয়া আসিয়াছেন। ইদানীং ইহাই রীতি। এমন রীতি যখন একটি রাজ্যে প্রচলিত হয়, তখন বুঝিতে হয় যে, পরিস্থিতির কিছু বিশেষত্ব আছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব কমিশনের। ভোটের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি হইবার পরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের ক্ষেত্রে কমিশনের নজরদারি ও হস্তক্ষেপের অধিকার বিস্তর। কমিশন রাজ্য প্রশাসনের সহিত সমন্বয়ের মাধ্যমে ও তাহার সহযোগিতার ভিত্তিতে সেই অধিকার প্রয়োগ করিবে, স্বাভাবিক অবস্থায় ইহাই প্রত্যাশিত। সেই সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কাজটি মসৃণ ভাবে চালু থাকিলে কমিশনের কার্যকলাপ ‘সংবাদ’ হইয়া উঠিবার কারণ থাকে না। সমস্যা দেখা দেয়, যদি ভোটের আয়োজন লইয়া রাজ্য প্রশাসনের সহিত নির্বাচন কমিশনের সংঘাত বাধে। রাজ্যে সেই টানাপড়েন নির্বাচনী মরসুমে অবধারিত ঘটনা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের বহুবিধ অভিযোগ উঠিবে এবং নির্বাচন কমিশন তাহার প্রতিকার করিবার যুক্তিতে প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করিবে— ইহাই কার্যত ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া গণ্য হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশনের পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা উত্তরোত্তর প্রবল হইতেছে।

Advertisement

এই বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভূমিকা নূতন মাত্রা অর্জন করিতেছে। বিশেষ পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সাধারণ পর্যবেক্ষক ও পুলিশ পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি ব্যয় পর্যবেক্ষকরাও রাজ্য জুড়িয়া সক্রিয় হইবেন। পর্যবেক্ষকদের সংখ্যাও এই বার দুই শতাধিক, ফলে বহু ক্ষেত্রে এক জন পর্যবেক্ষক একটি ভোটকেন্দ্রেই মনোনিবেশ করিবেন। পর্যবেক্ষকদের সংখ্যাই কেবল বাড়িতেছে না, প্রসারিত হইতেছে তাঁহাদের দায়িত্বের পরিধিও। তাঁহারা আপন আপন কেন্দ্রে ভোটারদের সহিত আলোচনা করিবেন, ভোটদানের বিষয়ে তাঁহাদের সমস্যা বা আশঙ্কার কথা শুনিবেন, প্রয়োজনে তাঁহাদের ভোট দিবার কাজে সহায় হইবেন, হয়তো অনুপ্রেরণাও দিবেন। স্পষ্টতই, এই বাড়তি দায়িত্বের পিছনেও রহিয়াছে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের ছায়া— শাসক দলের অনুগামী না হইলে ভোটদাতা সমস্যায় পড়িতে পারেন বা শঙ্কিত বোধ করিতে পারেন, এই অভিযোগ তথা ধারণার প্রতিকার করিতেই কমিশন পর্যবেক্ষকদের পরিত্রাতার ভূমিকা দিয়াছে। পর্যবেক্ষকদের এই ‘অতিসক্রিয়তা’ যদি অচিরেই কমিশন ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি করে, অভিজ্ঞ বঙ্গবাসী অবাক হইবেন না।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্কে দলীয় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অহেতুক বলিবার কোনও উপায় নাই। সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাহাও অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই ভূমিকার যথাযোগ্য মর্যাদা বজায় রাখিবার কাজটিও একই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান শাসকরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর যে ভাবে আধিপত্য বিস্তার করিয়াছেন, নির্বাচন কমিশন কি তাহা হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত? তাঁহাদের বিরোধী রাজনৈতিক দল যে রাজ্যের সরকার চালাইতেছে, সেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করিবার দুরভিসন্ধি কি এই শাসকদের নাই? নির্বাচনে রাজ্য প্রশাসনের অন্যায় হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করিবার নামে নিজেদের অন্যায় হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করিতে তাঁহারা আগ্রহী নহেন তো? পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন লইয়া কেন্দ্রীয় শাসক দলের উৎকট তৎপরতা, লাফঝাঁপ ও কেনাবেচা এই আশঙ্কা বহু গুণ বাড়াইয়া তুলিয়াছে। আশঙ্কা সত্য হইলে, কমিশন এবং তাহার পর্যবেক্ষকরা শাসক দলের নির্বাচনী বাহিনীর সহায়ক বা অংশীদার হইয়া উঠিলে বুঝিতে হইবে, ভারতীয় গণতন্ত্রের ঘোর দুর্দিন এই মরসুমে ঘোরতর হইতে চলিয়াছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement