TMC Jana Garjana

নতুনত্ব নয়

শাসক দলের প্রার্থী-তালিকাতেও অল্পবিস্তর চমক আছে। যেমন, বিবিধ পরিসরের ‘জনপ্রিয় তারকা’ হিসাবে কীর্তিতদের মধ্যে কয়েক জন বাদ পড়েছেন, কয়েক জন নবাগতও আছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫১
Share:

ফাল্গুনের শেষে খাস ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘জনগর্জন সভা’র নামকরণে নতুনত্ব ছিল। —ফাইল চিত্র।

বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ এখন আর শোনা যায় না, সুতরাং ফাল্গুনের শেষে খাস ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘জনগর্জন সভা’র নামকরণে নতুনত্ব ছিল। নাগরিকরা জেনেছিলেন যে, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রীয় শাসকদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জিত প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদের প্রচার অভিযান শুরু হতে চলেছে। শেষ অবধি দেখা গেল, জনসমাগম এবং জনগর্জন দুইই কিঞ্চিৎ স্তিমিত। তবুও, এই বঙ্গভূমিতে, আজও কেবলই চমকের জন্ম হয়। অতএব মহাতীর্থ কালীঘাট থেকে প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রবিবারের এই সভায় ঘোষিত হল রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নাম। কেবল নামকীর্তন নয়, সভাস্থলে প্রস্তুত বিশেষ যাত্রা-পথে মনোনীত প্রার্থীরা সারি বেঁধে নেতৃত্বের অনুগমনও করলেন। সংসদীয় রাজনীতি এবং ময়দানি রাজনীতির যে মহামিলন এ দেশে শতরূপে বিরাজমান, রবিবার তার আরও একটি প্রতিমা প্রকাশ হলেন।

Advertisement

শাসক দলের প্রার্থী-তালিকাতেও অল্পবিস্তর চমক আছে। যেমন, বিবিধ পরিসরের ‘জনপ্রিয় তারকা’ হিসাবে কীর্তিতদের মধ্যে কয়েক জন বাদ পড়েছেন, কয়েক জন নবাগতও আছেন। তবে অতীতের তুলনায় তারার মালাটি ক্ষীয়মাণ। বিষ্ণুপুর বা হুগলির মতো কিছু আসনে প্রার্থী-সংস্থাপনও হয়তো কৌতূহলী দর্শকের নজর কাড়বে। কোথাও বা প্রার্থী নির্বাচনের গভীরতর তাৎপর্যও আছে। যথা বহরমপুরের ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি কংগ্রেসের ভোট কাটা এবং পরোক্ষ মেরুকরণে সহায়তার মাধ্যমে বিরোধী জোটের ক্ষতিসাধন এবং বিজেপির উপকারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের যাথার্থ্য তর্কসাপেক্ষ, কিন্তু অভিযোগটিকে অহেতুক বলা শক্ত। অন্য দিকে, প্রার্থী নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় নানা অঞ্চলে বিবিধ পদপ্রত্যাশী এবং তাঁদের অনুগামী গোষ্ঠীকে নিয়ে যথারীতি নানা সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা স্পষ্ট। ব্যর্থ প্রত্যাশীদের কথা অন্য ভাবে বিবেচনা করা হবে— দলনেত্রীর এই আশ্বাসে তাঁরা সকলে, ব্যারাকপুরের সাংসদ সমেত, সন্তুষ্ট বোধ করতে পারবেন কি? কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিচার করলে শাসক দলের তালিকাটিতে বিভিন্ন ধরনের টানাপড়েন সামলে চলার চেষ্টাই প্রকট। নারী-পুরুষ, জাতিবর্ণ, ধর্মপরিচয়, আঞ্চলিক স্বার্থ এবং অন্য নানা মাত্রায় সেই টানাপড়েন উত্তরোত্তর বাড়ছে। মনে হতে পারে যে, বিবিধ কায়েমি স্বার্থের পিছুটান অস্বীকার করে রাজ্যের শাসকরা এক নতুন পথে হাঁটতে পারতেন, লোকসভা ভোটের প্রার্থী নির্বাচনে আত্মশুদ্ধির প্রমাণ দিতে পারতেন। কিন্তু তেমন কোনও ভাবনা বোধ করি তাঁদের স্বপ্নেও স্থান পায়নি।

শাসক দলের অন্দরমহলে নবীন বনাম প্রবীণ যে দ্বন্দ্বের কথা সাম্প্রতিক কালে বারংবার শোনা গিয়েছে, তার মোকাবিলাতেও এক ধরনের ভারসাম্য বিধানের চেষ্টা এই তালিকায় ছাপ ফেলেছে। বয়সে প্রবীণ বেশ কয়েক জন আবার প্রার্থী হয়েছেন, পাশাপাশি আছেন নতুন তরুণ মুখও। শীর্ষদেশেও তারুণ্যের ভূমিকা বেড়েছে। রবিবারের সভায় দেখা গিয়েছে প্রবীণ দলনেত্রীর পৌরোহিত্যে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মঞ্চ-জোড়া উপস্থিতি ও পদচারণা, যার মধ্যে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ক্রমশ দলীয় নেতৃত্বের লাগাম তুলে দেওয়ার সঙ্কেত আছে। কিন্তু দলের গতিপ্রকৃতি নিয়ে দলের লোকেরা মাথা ঘামাতে পারেন, বৃহত্তর প্রশ্নটি পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ নিয়ে। শাসক দলে নবীন প্রজন্ম শক্তিমান হলেই যে রাজ্য রাজনীতির কোনও উত্তরণ ঘটবে, অভিজ্ঞতা তার কিছুমাত্র ভরসা দেয় না। অতএব, টলিউডের দুই ভূতপূর্ব অভিনেত্রী, কিংবা আদালত থেকে নবাগত প্রবীণ এবং দলীয় রাজনীতিতে ও সান্ধ্য তর্কসভায় অভিজ্ঞ নবীন— ইত্যাকার নানা খুচরো খেলা দেখার আশা নিয়েই আপাতত রাজ্যের ভোট-দর্শকদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ডার্বির ভরসা বলতে সেই শিখরদেশে বিরাজিত মহাবীর এবং বীরাঙ্গনারাই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement