Economy

অস্বাস্থ্যকর

ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের রিপোর্টে নতুন উদ্ভাবনের পথে এগোনোর অক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অসমান আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। এই বাক্যটির প্রকৃত তাৎপর্য আপাতদৃষ্টিতে নজরে না-ও পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক স্তরে যে অর্থনৈতিক সংগঠন বা জোটগুলির সুদৃঢ় অস্তিত্ব রয়েছে, সেগুলির মধ্যে সম্ভবত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামই সবচেয়ে বেশি বাজারপন্থী, খোলা ধনতন্ত্রে বিশ্বাসী। ঐতিহাসিক ভাবে এই সংগঠনটির প্রধান উদ্বেগের বিষয় বৃদ্ধির হার, তার সুষমতা নয়। এ-হেন একটি মঞ্চ থেকেও যখন অসমান বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, তখন বোঝা সম্ভব যে, জল বিপদসীমার অনেক ঊর্ধ্বে বইছে। গোটা বিশ্বেই কোভিড-পরবর্তী পর্যায়ে আর্থিক পুনরুত্থান ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরের আকৃতি ধারণ করেছে। অর্থাৎ, আয়ের সিঁড়িতে উপরের দিকে থাকা তুলনায় কম সংখ্যক মানুষের আয় বেড়েছে আগের চেয়েও বেশি হারে; কিন্তু নীচের ধাপগুলিতে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় বাড়েনি বললেই চলে, অনেক ক্ষেত্রে কমেছেও বটে। ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রবণতাটি নিয়ে বিস্তর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদদের একটি বড় অংশ। আর্থিক বৃদ্ধি অসমান হলে তার ফল সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার পক্ষেই নেতিবাচক। তার কারণ, ব্যক্তির আয়ের পরিমাণ যত বাড়ে, মোট আয়ে ভোগব্যয়ের অনুপাত ততই কমে। যাঁর মাসিক আয় ১০,০০০ টাকা, তাঁর আয় মাসে আরও ৫,০০০ টাকা বাড়লে সেই টাকার যত অংশ ভোগব্যয়ে যাবে, যাঁর আয় মাসে ১,০০,০০০ টাকা, তাঁর আয় ৫,০০০ টাকা বাড়লে ভোগব্যয় ততখানি বাড়বে না। সে টাকা সম্ভবত সঞ্চয়ের খাতে যাবে। যে-হেতু ভোগব্যয়ের টাকা সরাসরি বাজারে পৌঁছয়, এবং অতি দ্রুত হাত বদলায়, ফলে ভোগব্যয়ের পরিমাণ বাড়লেই জাতীয় আয় সবচেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি পায়। অতএব, আর্থিক বৃদ্ধি অসম হলে— দরিদ্রতর জনগোষ্ঠীর আয় যথেষ্ট হারে না বাড়লে— সামগ্রিক ভাবে ভোগব্যয় বৃদ্ধির হার কমে, এবং তার পর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্যে।

Advertisement

ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের রিপোর্টে নতুন উদ্ভাবনের পথে এগোনোর অক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থব্যবস্থায় উদ্ভাবনের গুরুত্ব কতখানি, তা দেখিয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত অর্থশাস্ত্রী রবার্ট সোলো। আমেরিকার চার দশকের পরিসংখ্যান ব্যবহার করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূলধন গঠন যতখানি জরুরি, তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। বিংশ শতকের প্রথম চার দশকে আমেরিকায় শ্রমঘণ্টাপ্রতি উৎপাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছিল। সোলো দেখিয়েছিলেন যে, তার সাড়ে বারো শতাংশ ঘটেছিল মূলধনি খাতে লগ্নি বৃদ্ধির কারণে, আর অবশিষ্ট সাড়ে ৮৮ শতাংশ ঘটেছিল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে— আর্থিক বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনের গুরুত্ব এতখানিই। কিন্তু, উদ্ভাবনের খাতে বিনিয়োগের সমস্যা হল, তার থেকে প্রত্যক্ষ আর্থিক লাভ অর্জনে সময় লাগে। ফলে, বেসরকারি পুঁজি উদ্ভাবনে বেশি ব্যয় করতে নারাজ হয়— বিশেষত, যে সময় বাজার যথেষ্ট সতেজ থাকে না, তখন এই অনীহা প্রকট হয়।

এই ক্ষেত্রে সরকারের কর্তব্য কী? এক, উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য করছাড় বা অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দুই, সরকার নিজেই উদ্ভাবনের খাতে লগ্নি করতে পারে, অন্তত সে সব ক্ষেত্রে, যেখানে বেসরকারি পুঁজি লগ্নিতে সচরাচর আগ্রহী হয় না। কিন্তু, এই পথগুলিতে হাঁটার জন্য সরকারের হাতে টাকা চাই। তা আসবে কোথা থেকে? সেই অর্থের সংস্থান করতে হবে তাঁদের উপরে কর বসিয়ে, অসমান বৃদ্ধির সুফল যাঁদের কাছে গিয়েছে। অতিধনীদের উপরে আয়কর, কর্পোরেট করে ছাড়ের পরিমাণ হ্রাস ইত্যাদি সিদ্ধান্ত করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বৃদ্ধির পক্ষে ক্ষতিকর, এমন কোনও অবস্থাকে কোনও যুক্তিতেই মেনে নেওয়া চলে না— এমনকি মুক্ত ধনতন্ত্রের স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের যুক্তিতেও নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement